আইন আদালত ডেস্ক
ঢাকা, ২৭ অক্টোবর ২০২৫: অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিশেষ সহকারি উপদেষ্টার সহকারি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, “ন্যায্যতা এবং কমপ্লায়েন্সের ভিত্তিতে” অনলাইন জুয়ায় জড়িত অ্যাকাউন্টগুলো ব্লক করা হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আয়োজিত ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি আরও জানান, বিটিআরসি ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মেইল পাঠিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে, যা অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ সহকারী বলেন, “বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর ওয়েব ব্রাউজার ও অ্যাডসেন্স সেটআপের বিষয়ে একটি নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, যা তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভেটিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই নির্দেশিকা প্রকাশের মাধ্যমে মিডিয়া হাউজগুলোকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা হবে।” তিনি আরও জানান, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত গাইডলাইনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে, যা অনুমোদন পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হবে।
এদিকে, অনলাইন জুয়ায় জড়িত প্রায় ৫ হাজার মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। সরকার বর্তমানে একটি কমন ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, প্ল্যাটফর্ম ও অপারেটরদের সমন্বয়ে তথ্য সংরক্ষণ এবং নজরদারি পরিচালনা করা হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “যারা অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত, তাদের ফোন নম্বরের ইন্টারনেট গতি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।” তিনি জানান, সিম ও এমএফএসের ইকেওয়াইসি (ইলেকট্রনিক নো ইয়োর কাস্টমার) সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, “দেশকে অনলাইন জুয়া থেকে মুক্ত করতে হলে জুয়ার চক্রের সুডো সদস্যদের চিহ্নিত করা, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে লিংক স্লো করা, এবং যে নম্বর বা এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হয়, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে ব্লক করা হবে।” তবে, তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, এ প্রক্রিয়া ন্যায্যতা এবং কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে সম্পন্ন হবে।
সভায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, “১৬ ডিসেম্বরের পর সিম সংখ্যা ১০টিতে সীমিত করা হলে এটি জুয়া প্রতিরোধে সহায়ক হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “যারা জুয়া খেলছে, তাদের শনাক্ত করাও জরুরি।”
পেমেন্ট সিস্টেম এজেন্সির প্রতিনিধি জানান, সিম, মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সমন্বয়ের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
বিকাশের প্রতিনিধি জানান, “জুয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত দুই সপ্তাহে ৩৯৭টি মোবাইল নম্বর বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে অনলাইন ট্র্যাকিং প্রক্রিয়া উন্নয়নের জন্য ক্রলিং ইঞ্জিন ব্যবহারের কাজ চলছে।”
সভায় আরও প্রস্তাব করা হয়, অনলাইন স্ক্যাম এবং জুয়া প্রতিরোধে মাদক অধিদপ্তরের মতো একটি বিশেষ সংস্থা গঠন করা এবং ক্রস-ডোমেইন মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার।
সভায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।