আইন আদালত ডেস্ক:
চট্টগ্রাম বন্দরে পাখির খাদ্যের আড়ালে লুকিয়ে আনা প্রায় ২৫ হাজার কেজি নিষিদ্ধ পপি সিড (খেসারি বীজ) আটক করেছে কাস্টমস হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালান দুটি জব্দ করা হয়। কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, জব্দকৃত পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, মেসার্স আদিব ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান থেকে ৩২ হাজার ১০ কেজি “বার্ড ফুড” আমদানির ঘোষণা দেয়। ৯ অক্টোবর চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় এবং পরে অফডক ছাবের আহমেদ টিম্বার কোম্পানি লিমিটেডে সংরক্ষণ করা হয়। ১৪ অক্টোবর চালান খালাসের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এম এইচ ট্রেডিং কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিমিটেড কর্তৃক বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়।
তবে গোপন সূত্রে তথ্য পাওয়ার পর ২২ অক্টোবর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চালানটির খালাস স্থগিত করে। পরবর্তীতে কায়িক পরীক্ষার সময় দেখা যায়, প্রথম সারিতে থাকা ৭ হাজার ২০০ কেজি বার্ড ফুডের নিচে লুকানো রয়েছে ২৪ হাজার ৯৬০ কেজি পপি সিড। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তারা নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোপ্রযুক্তি সেন্টার এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করেন। তিনটি প্রতিষ্ঠানই পরীক্ষায় পণ্যটিকে পপি সিড হিসেবে শনাক্ত করে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবির জানান, অঙ্কুরোদগম সক্ষম পপি সিড মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসেবে বিবেচিত। পাশাপাশি আমদানি নীতি আদেশ ২০২১–২৪ অনুযায়ী এটি আমদানি–নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকাভুক্ত। তিনি আরও বলেন, “ঘোষণায় পণ্যের নাম ও প্রকৃতি গোপন রেখে নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির চেষ্টা করায় কাস্টমস আইন, ২০২৩ অনুযায়ী পুরো চালানটি জব্দ করা হয়েছে।”
কাস্টমস সূত্র জানায়, ঘোষণায় আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য দেখানো হয়েছিল মাত্র ৩০ লাখ টাকা। তবে জব্দকৃত পপি সিডের প্রকৃত বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঘটনাটি উদ্ঘাটনের পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধারণা করা হচ্ছে, পপি সিডগুলো অঙ্কুরোদগম সক্ষম হওয়ায় তা অবৈধভাবে উৎপাদন বা মাদক তৈরির কাজে ব্যবহারের সম্ভাবনা ছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ঘোষণায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত পণ্য আনার প্রবণতা বেড়েছে। এজন্য বন্দর এলাকায় কাস্টমসের নজরদারি ও স্ক্যানিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জব্দকৃত পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।