মালয়েশিয়ার নেগেরি সেম্বিলান রাজ্যের নিলাই এলাকায় একটি ব্যাটারি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১৮৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকালে পরিচালিত এই অভিযানে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকরা আটক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নেগেরি সেম্বিলান ইমিগ্রেশনের পরিচালক কেনিথ তান আই কিয়াং।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, আটককৃতদের মধ্যে ১৬৩ জন পুরুষ ও ২১ জন নারী রয়েছেন। তাদের বয়স ২০ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কতজন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন, সে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
কেনিথ তান জানান, বৈধ কর্মপারমিট ছাড়াই কাজ করার অভিযোগে জনসাধারণের তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে অনেক বিদেশি শ্রমিক কারখানার ভেতরে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন, তবে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাদের সবাইকে শনাক্ত করে আটক করতে সক্ষম হন।
তিনি আরও বলেন, আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের লেংগেং ইমিগ্রেশন ডিপোতে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের নথিপত্র যাচাই করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বৈধ ভ্রমণ নথি না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় দেশটিতে অবস্থান করা এবং মালয়েশিয়ার অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন লঙ্ঘন করা।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩, পাসপোর্ট আইন ১৯৬৬ এবং ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩ অনুযায়ী এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড, জরিমানা এবং বহিষ্কারাদেশের বিধান রয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর প্রত্যেক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কাজ করা বিদেশিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশটির শ্রমবাজারে অবৈধ কর্মীদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈধ শ্রমনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসব অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযান বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিল্প এলাকা, নির্মাণ খাত ও কারখানাগুলোতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, এসব অভিযানের লক্ষ্য হলো বৈধ কর্মভিসাধারী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা এবং অভিবাসন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব অভিযানে আটক হওয়া অনেক শ্রমিক বৈধ নথিপত্র নবায়নের প্রক্রিয়ায় থাকেন বা নিয়োগকর্তার অবহেলার কারণে সমস্যায় পড়েন। তারা অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষায় আরও স্বচ্ছ ও মানবিক নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অবৈধভাবে কাজ করা বা অবস্থানরত যে কেউ আইনের আওতায় আসবে। কর্তৃপক্ষ একই সঙ্গে নিয়োগকর্তাদেরও সতর্ক করেছে, যারা বৈধ অনুমতি ছাড়া বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও বৈধতা যাচাইয়ের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। শ্রমবিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নথিপত্র ব্যবস্থাপনায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বারবার।