বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নেতা সৈয়দ আবুল হোসেন ১৮ নভেম্বর মালয়েশিয়া পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পার্লামেন্টের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি প্রশাসন বিধিমালা (১৭) অনুযায়ী অনুষ্ঠিত বিশেষ চেম্বার অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেন বুকিত গানতাংয়ের এমপি ওয়াইবি দাতো সৈয়দ আবু হুসেন বিন হাফিজ সৈয়দ আব্দুল ফাসাল এবং বাংগির এমপি তুয়ান সিয়াহরেডজান বিন জোহান। উপস্থিত ছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সৈয়দ আবুল হোসেনের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনকে স্বাগত জানিয়েছে তার পরিবার ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কমিউনিটি। ইংল্যান্ডের ডার্লিংটনে বসবাসরত তার চাচাতো ভাই, কমিউনিটি নেতা ও ইমাম সৈয়দ ছাবির আহমদ বলেন, “সৈয়দ আবুল হোসেনের স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় আমরা গর্বিত। এটি শুধু আমাদের পরিবারের নয়, সমগ্র বাংলাদেশি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের জন্য গৌরবের বিষয়।”
সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৬০ সালের ২৯ জুলাই মালয়েশিয়ার তাইপিং, পেরাক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ আবুল ফজল ১৯৫৫ সালে সিলেটের জগন্নাথপুর থেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান এবং পরে মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব অর্জন করেন। তার মা মালয়েশিয়ান হলেও তিনি নিজের পিতৃপরিচয় নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমি বাঙালি পূর্বপুরুষের সন্তান হতে গর্বিত এবং নিজেকেও বাঙালি মনে করি।”
সৈয়দ আবুল হোসেন হাফিজ মাওলানা সৈয়দ আবুল ফজলের সাত পুত্র ও পাঁচ কন্যার মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি মালয়েশিয়ান বিএন পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং এর আগে মন্ত্রক অব হাউজিং অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্টের চেয়ার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিতে তিনি সরকার কর্তৃক দাতু উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
মালয়েশিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি অর্জনকারী সৈয়দ আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং পরিবারকে সহায়তায় সর্বদা আগ্রহী। তার চাচাতো ভাই ছাবির আহমদ জানান, সর্বশেষ ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন।
সৈয়দ আবুল হোসেনের পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ অটুট রয়েছে। তার মেয়ে বাংলাদেশের এক আত্মীয়ের ছেলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে তার মেয়ে ও জামাই ইংল্যান্ডের লিডসে বসবাস করেন। বড় ভাই সৈয়দ আবুল হাসান ১৯৮৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন এবং ২০০০ সালে ইন্তেকাল করেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও তার ভাগিনা সৈয়দ জহুরুল হক বলেন, “লন্ডনে এলে তিনি আত্মীয়-স্বজন সবার সঙ্গে দেখা করেন। তার এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত।” জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়ার সভাপতি সোনাহর খান রশিদ মন্তব্য করেছেন, “সৈয়দ আবুল হোসেনের এই অর্জন প্রবাসী সমাজের আত্মবিশ্বাস আরও শক্ত করেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন, শিকড়ের পরিচয় রক্ষা করেও বৈশ্বিক মঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব।”
সৈয়দ আবুল হোসেন তিনটি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এবং তিনি ১৬ সন্তানের জনক। তার এই সাফল্য মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের প্রভাব ও অবদানকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।