প্রবাস ডেস্ক
ইতালির নেপোলি শহরে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের গাড়িচাপায় নিহত হয়েছেন শরীয়তপুরের যুবক নাঈম ইসলাম শান্ত (২৫)। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতিকারীরা তাকে লক্ষ্য করে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়িচাপা দেয়। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বলে জানা গেছে। বুধবার সকালে খবরটি দেশে পৌঁছালে নিহতের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে শোকের পরিবেশ তৈরি হয়।
নিহত নাঈম শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মাহমুদপুর এলাকার এনামুল হক মাদবর ও তাজিয়া বেগম দম্পতির ছেলে। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় তিন বছর আগে পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করার আশায় তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। বিদেশে যাওয়ার জন্য তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা ঋণ নেন। প্রথমে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এক বছর আগে ইতালিতে পৌঁছান। পরে নেপোলি শহরের একটি ক্যাম্পে অবস্থান করে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেন। নিয়মিত আয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিবারের ঋণ পরিশোধ ও সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, নাঈম যে এলাকায় বসবাস করতেন, সেখানে কিছু স্থানীয় দুষ্কৃতিকারীর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছিল তাকে। কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় একাধিকবার তার কাছে টাকা-পয়সা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার রাতে কাজ শেষে ফেরার পথে তাকে লক্ষ্য করে একটি গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি গুরুতর আহত হন এবং পরে মারা যান বলে পরিবারের দাবি।
নিহতের স্বজনরা জানান, নাঈমের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হিসেবে বিদেশে কর্মরত নাঈমের ওপরই ভবিষ্যৎ নির্ভর করছিল। তার মৃত্যুতে পরিবারটি আর্থিক ও মানসিক সংকটে পড়েছে। নিহতের বাবা-মা ছেলের মরদেহ এক নজর দেখার জন্য তা দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়েছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ইতালিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি পরিচিতজনদের মাধ্যমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে পরিবার নিশ্চিত কোনো তথ্য পায়নি।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পরিবার লিখিত আবেদন করলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করা হবে।
প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে এই ঘটনাটি নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। জীবিকার তাগিদে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি নাগরিককে অনিরাপদ পরিবেশে বসবাস ও কাজ করতে হয়। স্থানীয় অপরাধচক্রের হয়রানি, বৈধ কাগজপত্রের জটিলতা এবং ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কারণে তারা অনেক সময় ঝুঁকির মুখে পড়েন। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।
নিহত নাঈমের পরিবার দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে তার মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে। ঘটনায় ইতালির স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তদন্তের ফলাফল এবং মরদেহ প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি এখন পরিবারের প্রধান প্রত্যাশা।