আইন ডেস্ক
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে প্রসিকিউশন কোনো ধরনের অনিরাপত্তা বোধ করছে না বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।
রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ হবে ১৩ নভেম্বর। এজন্য আমাদের আলাদা কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই এবং প্রসিকিউশন অনিরাপদও নয়। আমাদের কাজ হলো ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত সংস্থা থেকে আনা অভিযোগগুলো প্রমাণের চেষ্টা করা, সাক্ষ্য উপস্থাপন করা এবং যুক্তিতর্ক তুলে ধরা। রায় দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার।”
প্রসিকিউটর তামিম আরও বলেন, “১৩ নভেম্বর রায়ের দিন ঘোষণা করা হবে কি না—এই বিষয়ে কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বাস্তবে ওই দিন রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ট্রাইব্যুনাল সাধারণত আগে থেকেই নির্দিষ্ট রায়ের দিন দেয় না, বরং ‘রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ’ রাখে। এবার তারা রায়ের দিন নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর তারিখ রেখেছেন। যারা আইন-আদালতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, তারা হয়তো বিষয়টি ভিন্নভাবে বুঝেছেন।”
রায়কে ঘিরে সম্ভাব্য রাজনৈতিক উত্তাপ ও বিভিন্ন দলের কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতো করে কর্মসূচি নিতে পারে, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ বা মোকাবিলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। প্রসিকিউশনের ভূমিকা কেবল আইনি প্রক্রিয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে তিনি আরও জানান, রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনাল বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে কোনো বাধা বা ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা যায়নি। মামলার সব প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল এখন রায় ঘোষণার প্রস্তুতিতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সেদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের দিন ধার্যের জন্য ১৩ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বিচারকাজের শেষ দিনে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অন্যান্য প্রধানমন্ত্রী ও নেতাদের বিচারের উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। এর পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আসামিপক্ষের উপস্থাপিত যুক্তির কয়েকটি বিষয়ে জবাব দেন, এবং শেষ পর্যন্ত স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন পাল্টা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, সব সাক্ষ্য, নথি ও যুক্তিতর্ক বিশ্লেষণের পর মামলার রায় প্রস্তুত করা হচ্ছে। নির্ধারিত দিনে রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করা হবে, যা দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।