জাতীয় ডেস্ক:
বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী প্রশাসন সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৩ মাস ১৬ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ (মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। নতুন মেয়াদ অনুযায়ী, আগামী ১২ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আগামী ১২ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সেনা কর্মকর্তারা সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া, কোস্টগার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে কর্মরত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও ওই সময়ের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তবে তারা শুধুমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারাগুলির অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। এই ক্ষমতাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারাগুলি, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহৃত হবে।
এর আগে, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান করেছিল। ওই সময়ের পর থেকেই একাধিক দফায় এই ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। বিশেষত, নির্বাচনের পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে সেনাবাহিনী স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ভোটের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।
সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের একটি পদক্ষেপ হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই ব্যবস্থার ওপর বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছে। তারা এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে, বিশেষ করে নির্বাচনের পরে সম্ভাব্য ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করার জন্য।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে, এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক প্রভাব এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলমান থাকবে।