জাতীয় ডেস্ক
রাজধানী ঢাকায় গতকাল মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতের ঘটনাবলীতে আবারো বেড়েছে নাশকতামূলক কার্যক্রমের সংখ্যা। সূত্রাপুর ও মিরপুর বেড়িবাঁধে দুটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি একাধিক জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব নাশকতা মূলত ঢাকার বাইরে থেকে এসে ঘটানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার ফায়ার সার্ভিসের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মুহূর্তের মধ্যে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে বাসটি ফাঁকা ছিল, ফলে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একই রাতে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় আশুলিয়া পরিবহনের একটি বাসেও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এছাড়া, রাজধানীর অন্যান্য স্থানগুলোতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে রাত ৯টায় দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পর দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রাত ১০টার পর হাতিরঝিলের রেইনবো ক্রসিংয়ে এবং একই সময়ে কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তের সামনে আরও দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এই ধরনের নাশকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। গুলিস্তান, কাকরাইল মোড়, কারওয়ান বাজারসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে রাতভর তল্লাশি চালানো হয়। হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক মো. সাইদুর রহমান জানান, তাদের কাছে সন্দেহজনক কোনো গাড়ি বা সিএনজির মাধ্যমে বিস্ফোরক দ্রব্য আনা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে ২০টির বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ও ১১টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিপুল সংখ্যক লোকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, রাজধানীতে শঙ্কার কিছু নেই। তিনি মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মহানগরীর চলমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। গত তিন দিনে ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং ঝটিকা মিছিলের সাথে জড়িত ৫৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, অধিকাংশ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিই রাজধানীর বাইরে থেকে এসেছে এবং তারা হেলমেট ও মাস্ক পরে হামলা চালাচ্ছিল।
পুলিশ কমিশনার আরো জানান, এসব নাশকতায় অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। তিনি রাজধানীবাসীকে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য অপরিচিত কাউকে আশ্রয় না দিতে এবং সন্দেহজনক কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশকে জানাতে আহ্বান জানান।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এসব নাশকতাকারীদের প্রতিহত করা কঠিন হবে। রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় অরক্ষিত বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে, বিশেষত কম যাত্রীবাহী বাসগুলো লক্ষ্য করা হচ্ছে। তিনি জনগণকে অরক্ষিত বাসে আগুন লাগানোর মতো ঘটনা প্রতিরোধে আরও সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর এসব চেষ্টা রুখে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।