জাতীয় ডেস্ক:
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই জাতীয় সনদ সংক্রান্ত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য গণভোটে চার থেকে পাঁচটি প্রশ্ন রাখার পরিকল্পনা করছে। সরকার আশা করছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একযোগে গণভোট আয়োজন করলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী, এটি মেনে নেবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, সনদ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ তিন-চার দিনের মধ্যে স্পষ্টভাবে জানা যাবে।
জুলাই জাতীয় সনদ সংক্রান্ত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৪৮টি সংবিধান সম্পর্কিত। এসব প্রস্তাবের মধ্যে অন্তত ৩০টি বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বেশির ভাগ দল একমত। এই ৩০টি প্রস্তাব নিয়ে একটি প্যাকেজ প্রশ্ন রাখা হবে। অপর ১৮টি প্রস্তাবে বড় দলের মধ্যে বিশেষত বিএনপির ভিন্নমত রয়েছে। এসব প্রস্তাব, যেমন পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, নিয়ে আলাদা তিন-চারটি প্রশ্নের মাধ্যমে গণভোটের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গণভোটে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হবে, তারা ৩০টি একমত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পক্ষে কি না। অন্যদিকে, ভিন্নমত থাকা ১৮টি প্রস্তাবের সবকটি একাধিক প্রশ্নের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। তবে বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু বিষয় বাদও দেওয়া যেতে পারে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করা হবে। এরপর ওই আদেশ এবং ৪৮টি সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে হ্যাঁ ভোটে জয়ী হলে, আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে। বিকল্প সুপারিশে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে সংসদ সংবিধান সংস্কারে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) নিয়োগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলোও আলাদা প্রশ্ন হিসেবে গণভোটে রাখা হতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভোটারদের মতামত জানানো হবে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সরকারের কাছে একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা প্রদান করবে। তিনি জানিয়েছেন, “আমরা প্রত্যাশা রেখেছি, তবে শুধুমাত্র প্রত্যাশার ভিত্তিতে বসে থাকিনি। আমরা নিজেদের মতো কাজ করেছি। সনদ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে।”
তিনি আরও বলেন, সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়নের পথে প্রশাসনিক এবং আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে পুলিশ সংস্কার কমিশন আইনের খসড়া প্রণয়নের সময় প্রশাসনিক প্রতিরোধ উল্লেখ করেন। আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রস্তাব ছিল, কমিশন তিনজন আইজিপির নাম প্রস্তাব করবে এবং সরকার সেই তিনজনের মধ্যে একজনকে আইজিপি পদে নিয়োগ দেবে। তবে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটিতে পাঠানোর পর কিছু প্রশাসনিক প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
সরকার আশা করছে, এই পদ্ধতিতে সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হবে, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।