আইন ও আদালত ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আগামী ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করে। ২৩ অক্টোবর, অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান খানের সমাপনী বক্তব্য শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ১৪ জুলাই গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ, হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেয়া, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতে পলাতক রয়েছেন, এবং তাদের পলাতক অবস্থায় বিচার চলছে। অন্যদিকে, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামুন তার দায় স্বীকার করে আদালতে অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
এর আগে, গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে। মামলার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেন, তবে আসামিদের পক্ষ থেকে তাদের খালাসের আবেদন করা হয়েছে।
এছাড়া, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল ১৭ অক্টোবর থেকে বিচার কার্যক্রম শুরু করে এবং পরবর্তীতে ১২ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ১ জুন, প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে।
মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছের এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, এবং ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে বিক্ষোভ ও নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে।