নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি সোমবার (১৭ নভেম্বর) জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেন, গত বছরের বিক্ষোভ দমনকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
সামদাসানি বলেন, জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগকে দুঃখজনক মনে করে এবং এটি সব পরিস্থিতিতে সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি উল্লেখ করেন, ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের পর থেকে মানবাধিকার সংস্থাগুলি আহ্বান জানাচ্ছে যে, নেতৃত্ব ও দায়িত্বে থাকা সকল ব্যক্তি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়া, ভুক্তভোগীদের জন্য কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
মুখপাত্র আরও বলেন, যদিও হাইকমিশন সরাসরি বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল না, তবু সবসময় আন্তর্জাতিক অপরাধের মামলায় বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়ে আসছে। তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং ভুক্তভোগীদের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশ জাতীয় পুনর্মিলনের পথে এগোবে এবং সত্য, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি নিরাপত্তা খাতের রূপান্তরমূলক সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও শোষণ পুনরায় ঘটতে না পারে। হাইকমিশনার জানিয়েছেন, জাতিসংঘ এই প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায় এবং জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও বিচার ব্যবস্থার ওপর আন্তর্জাতিক মনোযোগ বাড়াবে। এটি দেশের জন্য এক প্রকার সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে, যাতে ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। পাশাপাশি, ভুক্তভোগীদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা প্রতিফলিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের এই প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার সুরক্ষা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। এটি ভবিষ্যতে দেশের মানবাধিকার নীতি ও নিরাপত্তা খাত সংস্কারে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।