নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি সংক্রান্ত সরকারি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে চুক্তিভিত্তিক সালিশি কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিচারপতি মো. বজলুর রহমান ও বিচারপতি উর্মি রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
আদালত এক আবেদনের শুনানি শেষে এই অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আবেদনটি করেছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আবদুল কাইয়ুম। তিনি ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা বা বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার এম আবদুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে যদি আদানি গ্রুপ সিঙ্গাপুরে তাদের পাওনা নিয়ে সালিশি কার্যক্রম শুরু করে, তাহলে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রমের গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তিতে একাধিক নিয়মবহির্ভূত বিষয় লক্ষ্য করা গেছে।
গত ৬ নভেম্বর আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ুম পিডিবি চেয়ারম্যান এবং জ্বালানি সচিবকে তিন দিনের মধ্যে একতরফা আদানি বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা বা বাতিল করার জন্য আইনি নোটিশ পাঠান। আদালতে দায়ের করা আবেদনে তিনি চুক্তিটি যথাযথভাবে পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
এর আগে ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর, হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ আদানি বিদ্যুৎ চুক্তি সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল জারি এবং অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রদান করে। সেই সময় আদালত আদানির সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎ চুক্তির বিষয়ভিত্তিক তদন্ত পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন এবং রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
চুক্তি সংক্রান্ত এই মামলা দেশের বিদ্যুৎ খাতের স্বচ্ছতা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটির কার্যক্রমকে সমর্থন করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করছে। আগামী সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর, আদালত আরও প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, যা আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির বৈধতা ও বাস্তবায়নের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
এই পদক্ষেপের ফলে আদানি গ্রুপের আন্তর্জাতিক সালিশি কার্যক্রম স্থগিত থাকায় বাংলাদেশি বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ ও চুক্তির স্বচ্ছতা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক নজির তৈরি হয়েছে। গবেষক ও খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের আদালতের নির্দেশনা দেশের সরকারি চুক্তির পর্যালোচনা প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে তা বিদ্যুৎ খাতের নীতি নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি সংক্রান্ত নিয়মাবলী প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এ ঘটনায় সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং বিচার বিভাগ চুক্তির স্বচ্ছতা ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।