নিজস্ব প্রতিনিধি
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে সংযোজিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল ও পূর্বের রায় বাতিল করার রায় প্রদান করেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে বলা হয়েছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত বিধানাবলি পুনরুজ্জীবিত ও ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্য হিসেবে কার্যকর হবে। রায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় দেশ গণতন্ত্রের মহাসড়কে হাঁটবে। তিনি উল্লেখ করেন, পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপ করে অনুষ্ঠিত নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছিল। বর্তমানে এই রায়ের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধানগুলো পুনরুজ্জীবিত ও কার্যকর করা হলো।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আজকের রায়ে আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো। এটি পরবর্তী সংসদ ভাঙার ১৫ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।” তিনি আরও জানান, এই ব্যবস্থা ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে সংযোজিত হয়েছিল এবং তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। রায়ের মাধ্যমে এটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ভবিষ্যতে এই রূপরেখার যে কোনো পরিবর্তন সংসদীয় আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব হবে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “২০ বছর পর জনগণ যদি মনে করে এই ব্যবস্থা প্রাসঙ্গিক নয় বা পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে, তবে তা নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা করা হবে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল আগের রায়ের ত্রুটি ও কলঙ্কজনকতা প্রসঙ্গে বলেন, পূর্বের রায় বাতিল করা হয়েছে কারণ তা ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তিনি জানান, রায় লেখার প্রক্রিয়ায় তখনকার প্রধান বিচারপতি ও সহযোগীরা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারার আওতায় অপরাধ করেছেন। তিনি আরও জোর দেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে ভবিষ্যতে এই রায়ের বিষয়ে পুনরায় কোনো মন্তব্য আসবে না।
রায়ের মাধ্যমে দেশজুড়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্বহাল, ভোটাধিকার রক্ষা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি হলো। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “একটি রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতের ভিত্তিতে নয়, বরং আইনি ব্যাখ্যা ও দেশের জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় প্রদান করা হয়েছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর হলে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সরকারের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভূমিকা নিশ্চিত হবে। এটি ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং রাজনৈতিক সহমত ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।
সর্বোপরি, আপিল বিভাগের রায় বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে, সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।