নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের একটি মন্তব্যকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং আদালত অবমাননার অভিযোগে আগামী ৮ ডিসেম্বর স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ মন্তব্য ফজলুর রহমান মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার রায়ের প্রেক্ষিতে একটি টকশোতে করেছিলেন।
রোববার (৩০ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এর শুনানি শেষে এই আদেশ প্রদান করা হয়। আদালত বলেন, “এই আদালত রাষ্ট্রের অংশ এবং আদালত অবমাননার যে কোনো মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।” ফজলুর রহমানের বক্তব্যকে আদালত অবমাননাকর হিসেবে বিবেচনা করে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম গত বুধবার ট্রাইব্যুনালে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ওই টকশোতে ফজলুর রহমান বলেন, “এই কোর্টের গঠনপ্রক্রিয়া বলে, এই কোর্টে বিচার হতে পারে না। এই কোর্টে যারা বিচার করছেন, আমার ধারণা এদের মধ্যে ভেতরে একটা কথা আছে। আমি এই ট্রাইব্যুনালের বিচার মানি না।” ট্রাইব্যুনাল এই মন্তব্যকে সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল বলে অভিহিত করেছে।
উল্লেখ্য, ফজলুর রহমানের বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে গত ২৬ আগস্ট বিএনপি তিন মাসের জন্য তার দলীয় সব পদ স্থগিত করেছিল। তবে পদ স্থগিত থাকা সত্ত্বেও কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসন থেকে তাকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বাংলাদেশের গঠন ও কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে। আদালতের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে ট্রাইব্যুনাল এবং এর বিচার কার্যক্রমে প্রশ্ন তোলা বা অবমাননাকর মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মধ্যে পড়ে এবং এটি সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়েরযোগ্য অপরাধ।
ফজলুর রহমানের মন্তব্যের প্রসঙ্গে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাইব্যুনালের আদেশের ফলে এই ধরনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে দেশের বিচারিক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কার্যক্রমের প্রতি যেকোনো অবমাননাকর মন্তব্যের ক্ষেত্রে সতর্কতা বৃদ্ধি পাবে।
আদালত অবমাননার মামলায় ফজলুর রহমানকে হাজিরা দেওয়ার দিন তার ব্যাখ্যা শোনার পাশাপাশি বিচারকগণ তার বক্তব্য ও এর প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করবেন। এর মাধ্যমে আদালত ও দেশের বিচারব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখার কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ফজলুর রহমানের মন্তব্য এবং ট্রাইব্যুনালের প্রতিক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন এক বিতর্ক তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের অভ্যন্তরীণ পদ স্থগিত থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন প্রদানের প্রেক্ষাপট এবং আদালতের শক্ত প্রতিক্রিয়ার সমন্বয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ জনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে।
টকশোতে করা মন্তব্যের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমানোর যে প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে, ট্রাইব্যুনালের কঠোর অবস্থান তা প্রতিহত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চেষ্টা আরও দৃঢ় হচ্ছে।
ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক পরিবেশের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এটি বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি জনসাধারণের আস্থা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করছে।