আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা জানে আলম খান মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সাক্ষ্য প্রদান শুরু করেছেন। ট্রাইব্যুনাল-২-এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আদালতের অপর সদস্য জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
বেলা সোয়া ১১টার পর ২৪তম সাক্ষী হিসেবে জানে আলমের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হলে মামলাটি যুক্তিতর্কের ধাপে প্রবেশ করবে। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, ফারুক আহাম্মদ ও সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান; এর আগে ২৬ নভেম্বর ২০তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। ওই দিন তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান এসআই আনিসুর রহমান পুনঃজবানবন্দি দেন। ২০ নভেম্বর রাজসাক্ষী এসআই শেখ আবজালুল হকের জেরা শেষ হয়। ৫ নভেম্বর ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিবের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তার সাক্ষ্যের সময় একজন নিহত হন এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকেও আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। ৩০ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ হওয়া ভুক্তভোগী সানি মৃধা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার তথ্য দেন একজন ভুক্তভোগী। তিনি ৫ আগস্ট আশুলিয়ার হত্যাকাণ্ডের নৃশংস দৃশ্যের বিবরণ দেন। ২৯ অক্টোবর আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। তিনি জানান, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল একই থানার ওসির নির্দেশে রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে থানায় জমা দেন।
প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান সাক্ষ্য দেন। মামলার সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি ৫ আগস্ট আশুলিয়ার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা উপস্থাপন করেন।
মামলায় গ্রেপ্তার আসামির মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, এসআই শেখ আবজালুল হক ও কনস্টেবল মুকুল। সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
চলতি বছরের ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-২ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। উপস্থিত আট আসামির মধ্যে সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন, তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি পান।
প্রসিকিউশন ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগের সঙ্গে ৩১৩ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৬২ সাক্ষী, ১৬৮ পৃষ্ঠা দালিলিক প্রমাণাদি এবং দুটি পেনড্রাইভ সংযুক্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনাল ১৬ জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংসতার সময় একজন বেঁচে থাকলেও তাকে পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের দিন আগের দিনও একজন নিহত হন। ১১ সেপ্টেম্বর মামলার রুজু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।