জাতীয় ডেস্ক
২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও পরবর্তী ঘটনাবলি নিয়ে নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একাধিক দাবি তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, সে সময় বিভিন্ন এলাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে নামলে নতুন তথ্য পাওয়া যায়। এসব দাবি তিনি সোমবার (৮ ডিসেম্বর) নিজের যাচাইকৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেইজে প্রকাশিত একটি বিশদ বিবরণে তুলে ধরেন।
প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেন, শাপলা চত্বরে সমাবেশস্থলের ভেতর ও বাইরে রাতে সংঘর্ষ এবং হতাহতের খবর আসতে শুরু করে। পল্টন, বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল মোড় ও মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল বলে তিনি দাবি করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সে সময় তিনি মতিঝিলের একটি ভবন থেকে টানা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং সড়কজুড়ে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি দেখতে পান।
শফিকুল আলম জানান, রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছে প্রথম দফায় মৃতদেহ আসার খবর আসে। তিনি দাবি করেন, সেসব মৃতদেহের পরিচয় বা মৃত্যুর কারণ তখন পরিষ্কার ছিল না। রাত আটটার দিকে তারা শাহিদবাগ–মালিবাগ এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছয়জনের মৃতদেহ নেওয়ার তথ্য পান। তার বক্তব্য অনুযায়ী, মৃতদেহগুলোতে গুলিচিহ্ন ছিল এবং হাসপাতালের একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে তারা তথ্যটি নিশ্চিত হন। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় একটি উৎস থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর তারা হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে আরও নির্ভরযোগ্য ধারণা পেতে শুরু করেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, পরদিন কাকরাইলের আরেকটি হাসপাতালে নতুন করে হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়। তার দাবি অনুযায়ী, বিভিন্ন স্থানে মৃতদেহের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরপর নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর–সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় একটি বড় ঘটনার কথা জানতে পারেন। তিনি বলেন, সমাবেশস্থল ছাড়ার পর পরিবহন সংকটে পড়া একদল মানুষ হেঁটে বাড়ি ফিরছিল এবং ভোরে সেখানে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। তার দাবি অনুযায়ী, ওই ঘটনায় প্রায় ২০ জন নিহত হন। তিনি দাবি করেন, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে ঘটনাটির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো তথ্য সরাসরি জানানো হয়নি, তবে হাসপাতালের কর্মীদের মাধ্যমে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়।
তার বিবরণে উঠে আসে, সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে হতাহতের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকে সফল পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। শফিকুল আলম বলেন, সরকারি পক্ষ যখন সীমিত সংখ্যক হতাহতের কথা জানিয়েছিল, তখন তাদের সংগ্রহ করা তথ্যের হিসাব তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিটি মৃত্যুর উৎস আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয়, যা প্রতিবেদনের কাঠামোকে জটিল করে তুলেছিল বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন শাপলা চত্বরের ঘটনাবলি নিয়ে পৃথক তদন্ত করে হতাহতের আনুমানিক সংখ্যা সম্পর্কে নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের সংখ্যার উল্লেখ পাওয়া যায় বলে তার বক্তব্যে দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেন, পরে তিনি জানতে পারেন রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সংঘটিত সহিংসতার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও তোলা হয়েছিল। এ বিষয়ে তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন এবং তাদের পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কেও বর্ণনা দেন।
তার বিবরণে আরো বলা হয়, পরবর্তী বছরগুলোতেও রাজনৈতিক বিরোধের প্রেক্ষাপটে একই ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে ব্যাপক রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং এর প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে বিস্তৃত প্রভাব ফেলে।
শফিকুল আলমের এই বর্ণনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর ঘটনাটির বিভিন্ন দিক ও দাবি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে অতীতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি সূত্রের তথ্যের মধ্যে তখন থেকেই উল্লেখযোগ্য অমিল ছিল।
তার সর্বশেষ বিবরণে তিনি ওই সময়ের প্রতিবেদনের অভিজ্ঞতা, তথ্য সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। ঘটনাটির সার্বিক প্রেক্ষাপট জটিল হওয়ায় বিভিন্ন পক্ষের দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে। তবে নতুন করে প্রকাশিত এই অভিজ্ঞতামূলক বিবরণ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটনাটিকে নিয়ে আলোচনাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে পুনরায় অনুসন্ধান বা গবেষণার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আগ্রহ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।