জাতীয় ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দিক সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে বহুমাত্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, নির্বাচনের পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ এগিয়ে চলছে।

বৈঠক-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তার মতে, প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে মাঠপর্যায়ে সদস্যদের দক্ষতা আরও বাড়বে এবং ভোট গ্রহণের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা আরো সক্ষম হবে। তিনি জানান, নির্বাচনের দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বডি ক্যামেরা ব্যবহার করবেন, যা নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, বিদ্যুৎ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হলে ভোটগ্রহণের স্বাভাবিক গতি ও কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য কেন্দ্রভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা তদারকি জোরদার করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে—এমন প্রত্যাশা বাস্তবসম্মত নয়। তার ভাষ্য অনুযায়ী, অপরাধ প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও অপরাধ প্রবণতা হঠাৎ করে শূন্যে নেমে আসা সম্ভব নয়। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে এবং সম্ভাব্য নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারি ও মাঠপর্যায়ের টহল বৃদ্ধি করা হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে সব রাজনৈতিক দল মাঠে সক্রিয় থাকার সুযোগ পাচ্ছে। যে দলগুলো মাঠে নেমে প্রচার করতে আগ্রহী, তারা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু দল বা রাজনৈতিক অংশ এখনো সংগঠনের কাঠামো কিংবা অফিস ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সক্রিয় প্রচারণায় অংশ নিতে পারছে না। উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার। এজন্য প্রার্থীদের নিরাপত্তায় বিশেষ নজরদারি, প্রচারণা-সংক্রান্ত অনুমতি প্রদান প্রক্রিয়া, সভা-সমাবেশ ব্যবস্থাপনা ও গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

বৈঠকে দেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় বলে জানা গেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি রংপুরে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, নির্বাচনের সময় সম্ভাব্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হবে। প্রয়োজনে বিজিবি, র‌্যাব, সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বিত টহল পরিচালনা করা হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে অস্ত্র, বিস্ফোরক বা নিষিদ্ধ দ্রব্যের অনুপ্রবেশ রোধে বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন ও মোবাইল দল পরিচালনার পরিকল্পনাও রয়েছে।

এছাড়া, নির্বাচনী অপরাধ প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, প্রার্থী ও সমর্থকদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ এবং গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখার বিষয়েও আলোচনা হয়। তিনি জানান, পরিবহন ব্যবস্থায় কৃত্রিম সংকট তৈরি বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মতো অনিয়ম প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, গৃহীত পদক্ষেপ ও নজরদারি বৃদ্ধির ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিবেশ বজায় রাখতে আন্তঃসংস্থাপন সমন্বয় আরও জোরদার করা হবে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ এবং সেগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগও বৈঠকে আলোচনা হয়।

নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে পরিবর্তন হতে পারে, তা বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সম্ভাব্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে বলে উপদেষ্টা জানান। তিনি মনে করেন, সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিকল্পিত তদারকির মাধ্যমে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে এবং ভোটারদের আস্থা বাড়বে।