জাতীয় ডেস্ক
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে লন্ডনে নেওয়ার জন্য নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে না। অপারেটর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য আগে পাওয়া অনুমোদন বাতিলের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করার পর এই পরিবর্তন ঘটে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এফআই এভিয়েশন গ্রুপ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটির ঢাকায় অবতরণ এবং পরবর্তী উড্ডয়নের জন্য পূর্বে নেওয়া অনুমোদন প্রত্যাহারের আবেদন করেছে। বেবিচক আবেদনটি যাচাইয়ের পর পরবর্তী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
এর আগে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটিকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের অনুমতি দিয়েছিল। একই দিনে রাত ৯টার দিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে উড্ডয়নেরও অনুমতি দেয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলছিল। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি জার্মানির এফআই এভিয়েশন গ্রুপের হলেও এটি কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে ভাড়া করা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। দেশে চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে পরিবারের পক্ষ থেকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
স্বাস্থ্যগত অবস্থার অবনতির প্রেক্ষাপটে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়। সংশ্লিষ্ট এয়ার অপারেটর প্রতিষ্ঠান সব ধরনের কাগজপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই বেবিচকের কাছে অনুমতির আবেদন করেছিল। অনুমোদন মেলায় নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বিমানবন্দরে অবতরণ ও উড্ডয়নের সময় ঠিক করা হয়েছিল। তবে হঠাৎ করে অপারেটর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুমোদন বাতিলের অনুরোধ করায় পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বয়, ফ্লাইট রুট নির্ধারণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গন্তব্য দেশের অনুমোদনসহ একাধিক ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। অপারেটর প্রতিষ্ঠান কোনো কারণে এসব প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রয়োজন অনুভব করলে অনুমোদন বাতিলের অনুরোধ করা স্বাভাবিক। তবে এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বাতিলের কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের আগমন স্থগিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা কখন সম্ভব হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে এখন নতুন তারিখ নির্ধারণ বা নতুন এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করার মতো বিকল্প বিবেচনায় আসতে পারে। স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণে উন্নত চিকিৎসা পেতে বিদেশযাত্রা দ্রুত প্রয়োজন বলে পরিবার ও দলের নেতাদের পক্ষ থেকে পূর্বে বিভিন্ন সময়ে জানানো হয়েছিল।
খালেদা জিয়ার বিদেশে নিতে প্রয়োজনীয় অনুমতির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে আইনগত প্রক্রিয়া, প্রশাসনিক অনুমোদন, বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগসহ নানা বিষয় সম্পন্ন করতে হয়। অনুমোদন বাতিলের অনুরোধের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
নতুন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ফ্লাইট স্থগিত থাকবে। পরিবারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নতুন করে আনুষ্ঠানিকতা গ্রহণ বা আগের প্রক্রিয়াকে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিষয়টি নজরে রয়েছে, কারণ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক পরিবেশে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দেয়।
পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনগুলোতে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার কার্যক্রম কীভাবে এগোবে তা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সিদ্ধান্ত ও অপারেটর প্রতিষ্ঠানের নতুন সূচির ওপর নির্ভর করবে। আপাতত নির্ধারিত সময়ে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের আগমন বাতিল হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে।