আইন আদালত ডেস্ক
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এ গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চলমান বিচারপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ২২তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেবেন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সাক্ষ্যগ্রহণ পরিচালনা করবেন। প্যানেলের অন্য দুই বিচারক হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, সাক্ষ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে হাসনাত আবদুল্লাহ নির্ধারিত সময়ে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হতে পারেন।
এ মামলায় মোট ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ছয়জন বর্তমানে গ্রেপ্তার অবস্থায় রয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন এএসআই আমির হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্র সংগঠনের নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল এবং আনোয়ার পারভেজ। বাকি ২৪ জন পলাতক, যাদের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় খরচে চারজন আইনজীবী তাদের পক্ষে মামলার দায়ভার গ্রহণ করেছেন।
এর আগে ২৭ নভেম্বর ২১তম সাক্ষীর জেরা গ্রহণের মধ্য দিয়ে টানা ১৮তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন পর্যায়ের সাক্ষীরা আদালতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা।
২৩ নভেম্বর জবানবন্দি দেওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় আবু সাঈদকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং তাকে মৃত ঘোষণা করার পর পুলিশ লাশটি তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্য দেওয়া শিক্ষার্থী শান-এ রওনক বসুনিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুরো ঘটনার বিভিন্ন দিক আদালতে তুলে ধরেন। একইভাবে ১৬ নভেম্বর মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিক ঘটনার দিনকার পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বিস্তারিতভাবে জানান।
১২ নভেম্বর দেওয়া সাক্ষ্যে এসআই মো. আশরাফুল ইসলাম উল্লেখ করেন যে রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন সহকারী কমিশনার ও তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে চালানো গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১০ ও ১১ নভেম্বরও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা আদালতে ঘটনাবিবরণ তুলে ধরেন, যারা গণ-অভ্যুত্থানের দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
ইতিপূর্বে সাক্ষ্যগ্রহণ কখনও কখনও বিলম্বিত হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর এবং ২১ ও ১৩ অক্টোবর নির্ধারিত সাক্ষীরা উপস্থিত না হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে শুনানির তারিখ পেছানো হয়। এ ছাড়া ২৪ নভেম্বর এক পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ বিশেষ কারণে স্থগিত করা হয়েছিল।
মামলার বিচারিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই বছরের ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে। এর আগে ৬ আগস্ট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত সংস্থা ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়, যা ৩০ জুন আমলে নেওয়া হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, মোট ৬২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়ার কথা রয়েছে।
আবু সাঈদ রংপুর অঞ্চলে জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-নাগরিক আন্দোলনের প্রথম নিহত শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখিত। তার মৃত্যু দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, সমাবেশ এবং বিচার দাবি তীব্রতর করে। বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি এ মামলার মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান–সম্পর্কিত ঘটনাগুলোর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আজকের সাক্ষ্যগ্রহণ মামলার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আইন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। সাক্ষীরা আদালতে পর্যায়ক্রমে ঘটনার প্রেক্ষাপট, দায়ীদের ভূমিকা এবং গুলিবর্ষণের পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরছেন, যা মামলার সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রভাব ফেলতে পারে। আদালতের পরবর্তী কার্যক্রম সাক্ষ্যগ্রহণের অগ্রগতি ও সাক্ষীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।