রাজনীতি ডেস্ক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অচিরেই দেশে ফিরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দল পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা করছেন। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ বিষয়ক আলোচনা সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন চিন্তা-চেতনার বিকাশ সম্ভব হবে। তবে তিনি তার দেশে ফেরার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করেননি। তিনি জানান, দলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে তারেক রহমানকে দেশে ফিরে রাজনৈতিক নেতৃত্বে দেখতে আগ্রহী, এবং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও তার উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।
বক্তব্যে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, চলমান চিকিৎসার মধ্যে থেকেও খালেদা জিয়া দেশের গণমানুষের কাছ থেকে ব্যাপক দোয়া ও সমর্থন পেয়েছেন। মির্জা আব্বাসের ভাষ্যে, পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে খালেদা জিয়া শুধু তার দলের নেতা নন, বরং দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে একজন অভিভাবকের মতো মর্যাদা অর্জন করেছেন। তিনি দাবি করেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষ নেত্রীর সুস্থতা কামনায় দোয়া করেছেন, যা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিরল দৃশ্য।
তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চিকিৎসার আরও উন্নতির মাধ্যমে খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসবেন। তার মতে, চলমান জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি আলোচনায় আসা সমালোচনার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শর্ত হিসেবে সংস্কারের কথা বললেও তারা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি কোন ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। মির্জা আব্বাস দাবি করেন, বিএনপির নীতিনির্ধারণে সংস্কারের প্রয়াস অতীতে বিভিন্ন সময়ই নেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও তা করা হবে।
তিনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে উল্লেখ করেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের অর্থনৈতিক খাতের আধুনিকায়ন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার মতে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতের ভিত্তি সেই সময়েই স্থাপিত হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতিকে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো নিয়ে দলীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিস্তৃত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনার পাশাপাশি দলটির চলমান রাজনৈতিক কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়। বিকেলে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
মির্জা আব্বাস তার বক্তব্যে বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, সেগুলো মোকাবিলায় দলকে আরও সুসংগঠিত হতে হবে। তিনি বলেন, আগামীর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বের মধ্যে ঐক্য, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও নীতিগত স্থিতি নির্ধারণকারী ভূমিকা পালন করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান উদ্যোগগুলো দলের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে এবং জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বক্তারা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও জনসম্পৃক্ত কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। তাদের মতে, ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচির আলোচনাগুলো দলীয় নীতিনির্ধারণে ভবিষ্যতে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।