রাজনীতি ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিন্নমত প্রকাশের ক্ষেত্রে শালীনতা, পরিমিত ভাষা ও যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দায়িত্বশীল আচরণের ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর তাঁর ভেরিফায়েড সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন যে ভিন্নমতকে যুক্তি ও ভদ্রতার মাধ্যমে মোকাবিলা করাই একজন সচেতন নাগরিক ও মুসলিমের বৈশিষ্ট্য।
প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, গালিগালাজ, কটূক্তি বা ব্যক্তি-বিদ্বেষমূলক আচরণ কোনোভাবেই সভ্য সমাজের মানদণ্ড হতে পারে না। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার, নারীর প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য এবং প্রযুক্তি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তি ও পরিবারকে হেনস্তা করার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। তিনি মনে করেন, এসব আচরণ কেবল নৈতিক অবক্ষয়েরই পরিচায়ক নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতি হ্রাসের ঝুঁকিও তৈরি করছে।
ডা. শফিকুর রহমান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ধর্মীয় পরিচয় ধারণকারী কারও কাছ থেকে অশালীন ভাষা বা অনভিপ্রেত আচরণ দেখা গেলে তা সমাজের সাধারণ মূল্যবোধে আঘাত হানে। তাঁর মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে ব্যক্তি তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করতে পারেন; তবে এই স্বাধীনতা অপব্যবহার হলে তা সমাজে বিভাজন, বৈরিতা ও উত্তেজনা বাড়াতে পারে। তিনি সবাইকে মনে করিয়ে দেন যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত প্রতিটি শব্দ ও মন্তব্য কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও সামাজিক পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক মতপার্থক্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মতের অমিল থাকা স্বাভাবিক এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। তবে মতপার্থক্যকে শত্রুতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া বা অন্যকে বিদ্বেষের সঙ্গে আক্রমণ করার মানসিকতা সমাজে বিভেদ গভীর করে। তিনি ধর্মীয় শিক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন যে ইসলাম অনুসারীদের পরস্পরের প্রতি উত্তম আচরণ, নম্র ভাষা ও পরিশীলিত ব্যবহার শেখায়। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, কটূক্তি বা অভিশাপ ছোড়া মুসলিম পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, পবিত্র কুরআনে মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধা, সৌজন্য ও দায়িত্ববোধ বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যকে উপহাস করা বা অপমান করার মনোভাব সামাজিক শান্তিকে ভঙ্গ করে এবং তা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। তিনি মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তৃত ব্যবহারের ফলে মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ বেড়েছে, তবে একই সঙ্গে অসংযত ভাষা, ভুল তথ্য এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের হারও বাড়ছে। এ পরিস্থিতি সামলাতে সচেতন ব্যবহারকারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডা. শফিকুর রহমান অনলাইন আচার-ব্যবহারে দায়িত্বশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রযুক্তি মানুষের সৃজনশীলতা ও জ্ঞানচর্চাকে এগিয়ে নিতে পারে, তবে অপব্যবহার হলে তা মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে পারে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিটি লেখা, মন্তব্য ও পোস্ট ব্যক্তির পরিচয়ের অংশ হয়ে থাকে এবং তা সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা বহন করে। এ কারণে তিনি সবাইকে যুক্তি, শালীনতা ও সত্যনিষ্ঠতার ওপর ভিত্তি করে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক দায়িত্ববোধ অনলাইনেও একইভাবে প্রযোজ্য। বাস্তব জীবনের মতোই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সতর্কতা, আত্মসংযম ও সম্মান প্রদর্শন গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, ব্যক্তির প্রতিটি বক্তব্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে সংরক্ষিত হয়—এই বিশ্বাস মানুষের আচরণকে আরও দায়িত্বশীল করে তুলতে পারে।
ডা. শফিকুর রহমানের এ বক্তব্য বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। প্রযুক্তির বিস্তারে মানুষের মত প্রকাশের সুযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি অনলাইন আক্রমণ, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার ও ব্যক্তিগত মানহানিকেও সহজ করে তুলেছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব আচরণ উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং তা সামগ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
তাঁর আহ্বান অনুযায়ী, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্ত ভাষা ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সুস্থ অনলাইন সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি মনে করেন, যুক্তি ও শালীনতার ভিত্তিতে মতভেদ মোকাবিলা করলে সমাজে সংলাপের পরিবেশ শক্তিশালী হবে এবং সামাজিক সম্প্রীতিও বজায় থাকবে। তাঁর মতে, ঘৃণা বা বিদ্বেষমূলক কথার বদলে পরিমিত ও সংযত বক্তব্য সমাজ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।