অর্থনীতি ডেস্ক
দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভরি প্রতি সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪৫৩ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস) শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। নতুন এই মূল্যহার রোববার, ১৪ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণ বা পিওর গোল্ডের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বর্ণের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে স্বর্ণের দামের ওঠানামা এবং স্থানীয় বাজারে কাঁচামালের মূল্য পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
নতুন মূল্যতালিকা অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৯৭ টাকা। একই সঙ্গে ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৫ হাজার ৮০০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
স্বর্ণের পাশাপাশি রূপার দামও বাড়ানো হয়েছে। নতুন দর অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রূপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৭২ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রূপা ৪ হাজার ৩৬২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৩ হাজার ৭৩২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপার দাম ২ হাজার ৮০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি, ডলার বিনিময় হারের ওঠানামা এবং আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি দেশীয় বাজারে স্বর্ণ ও রূপার দামে প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে স্বর্ণের একটি বড় অংশ আমদানিনির্ভর হওয়ায় বৈশ্বিক বাজারের পরিবর্তন দ্রুত স্থানীয় দামে প্রতিফলিত হয়। পাশাপাশি কর, শুল্ক ও পরিবহন ব্যয়ও মূল্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ফলে গহনা শিল্পে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সাধারণত বিয়ের মৌসুম বা উৎসবকেন্দ্রিক সময়ে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ে। দাম বেশি থাকলে ভোক্তারা গহনা কেনায় কিছুটা সংযত হতে পারেন, যা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের বিক্রিতে প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে, বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে স্বর্ণ কেনার প্রবণতা কিছু ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে, কারণ অনেক বিনিয়োগকারী স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেন।
রূপার দাম বৃদ্ধিও শিল্প ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। স্বর্ণের তুলনায় রূপা তুলনামূলকভাবে কম দামের হলেও নিয়মিত মূল্য সমন্বয়ের কারণে ছোট ব্যবসায়ী ও কারিগরদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈশ্বিক বাজারে স্বর্ণের দামের স্থিতিশীলতা বা আরও ওঠানামার ওপর নির্ভর করে আগামী দিনে দেশীয় বাজারে পুনরায় দাম সমন্বয় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য বাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন হবে।
সব মিলিয়ে, নতুন মূল্যহার কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের স্বর্ণ ও রূপার বাজারে আরেক দফা মূল্য সমন্বয় সম্পন্ন হলো, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।