জেলা প্রতিনিধি
খুলনার রূপসা এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে সাগর নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাড়ে জাবুসা ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাগর স্থানীয় গ্রিন বাংলা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা ফায়েক শেখের ছেলে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় সাগর নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কয়েকজন যুবক তার চলার পথ রোধ করে অতর্কিতভাবে গুলি চালায়। এতে একটি গুলি তার মাথায় এবং আরেকটি গুলি হাঁটুতে বিদ্ধ হয়। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সাগরকে গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রূপসা সেতু সংলগ্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর জনসমাগম তুলনামূলক কম থাকায় প্রায়ই অপরাধীরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করে এবং আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে।
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক মীর জানান, কী কারণে এবং কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত সাগরের পূর্বের কোনো বিরোধ, ব্যক্তিগত শত্রুতা কিংবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি তাৎক্ষণিক কোনো বিরোধের জেরে সংঘটিত হয়েছে, সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং প্রতিবেদনের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে আনার আগেই সাগরের মৃত্যু ঘটে। তার শরীরে আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাত ছিল মারাত্মক, বিশেষ করে মাথায় লাগা গুলিটি প্রাণঘাতী ছিল। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। স্বজনরা দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তারা জানান, সাগর নিয়মিত জীবনযাপন করতেন এবং ঘটনার সময় তিনি বাড়ি ফেরার পথেই ছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, তবে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে বলে জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই, হামলা ও সহিংসতার ঘটনা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। নিরাপত্তা জোরদার এবং অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে তারা তৎপর রয়েছে।
পুলিশ আশা প্রকাশ করেছে, তদন্তের মাধ্যমে শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে এলাকায় নজরদারি বাড়ানো এবং নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।