নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পল্টন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর থেকে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গুলির ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা ও সহায়তার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের অংশ হিসেবে ঘটনার সময়কার গতিবিধি, যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখার পক্ষ থেকে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন প্রধান সন্দেহভাজনের ঘনিষ্ঠজন, তার আত্মীয়স্বজন ও সংশ্লিষ্ট যোগাযোগসূত্রে থাকা কয়েকজন রয়েছেন। তদন্তে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যে উঠে এসেছে, হামলার সঙ্গে যুক্ত একটি মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছিল এবং এর মালিকানার বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন কয়েকজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের অবস্থান শনাক্তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের কর্মকর্তারা আরও জানান, মূল সন্দেহভাজন এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাকে ধরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পুরস্কার ঘোষণার পর জনসাধারণের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহে বিশেষ হটলাইন ও যোগাযোগব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এতে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যেতে পারে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় বক্স কালভার্টের সামনে শরিফ ওসমান হাদির ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানো হয়। সে সময় তিনি একটি রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। একটি মোটরসাইকেল থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। হামলার সময় রিকশায় তার সঙ্গে অন্য কেউ ছিলেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আশপাশের লোকজনের সহায়তায় শরিফ ওসমান হাদিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, দ্রুত চিকিৎসা শুরু হওয়ায় তার অবস্থা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে চিকিৎসার অগ্রগতি ও শারীরিক অবস্থার বিষয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চলছে।
এই হামলার পর রাজধানীর রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নাকি পূর্বপরিকল্পিত—তা নির্ধারণে তদন্ত চলছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য এতে জড়িত ছিল কি না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছেন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য গ্রহণ করছেন।
পুলিশ আরও জানায়, মামলার তদন্তে কোনো ধরনের গাফিলতি করা হবে না। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, মোবাইল কল ডিটেইলস এবং আর্থিক লেনদেনের তথ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংস ঘটনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা স্পষ্ট হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।