নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার পুরান পল্টনে যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির ওপর হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ বর্তমানে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। তদন্তে জানা গেছে, ফয়সাল বাংলাদেশি সিমকার্ড ব্যবহার না করে ভারতীয় টেলিকম অপারেটর রিলায়েন্স জিওর সিম ব্যবহার করছেন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে বেশিরভাগ সময় তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে ফয়সাল মোবাইল ফোনে ভিপিএন ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের লোকেশন দেখাচ্ছিল। কখনো সিঙ্গাপুর, কখনো থাইল্যান্ড, আবার কখনো ঢাকার পুরান এলাকার অবস্থান ফোনে ভেসে উঠছিল। তবে আইএমই নম্বরের সূত্র ধরে প্রযুক্তিগত সহায়তায় তার বর্তমান অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এই সময় তার সঙ্গে সহযোগী মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখও উপস্থিত ছিলেন।
হত্যাচেষ্টার পেছনে অর্থায়ন কারা করেছে তা উদঘাটনে তদন্ত তৎপর রয়েছে। ফয়সালের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বিশ্লেষণ করে অর্থের উৎস শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই তার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-কে চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছে।
হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে। র্যাব নরসিংদীর একটি লেক থেকে তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। তদন্তে জানা গেছে, ঘটনার পর ফয়সাল আগারগাঁওয়ে তার বোনের বাসায় অস্ত্রভর্তি একটি কালো ব্যাগ লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরে শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপুর মাধ্যমে সেটি নরসিংদীর গ্রামে পাঠানো হয়। ফয়সালের নির্দেশে স্থানীয় এক যুবকের হাতে পৌঁছানোর পর আলামত নষ্ট করতে ব্যাগটি লেকে ফেলা হয়। উদ্ধারকৃত ব্যাগে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি খেলনা পিস্তল এবং ৪১ রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে। এর আগে আগারগাঁওয়ের একটি বাসার নিচ থেকে আরও দুটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও মা মোসা হাসি বেগম আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা ঘটনার একটি স্পষ্ট চিত্র পেয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে কয়েকজন আসামি রিমান্ডে রয়েছে এবং নতুন করে আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, মোটরসাইকেলের কথিত মালিক আবদুল হান্নান, সীমান্ত এলাকায় মানব পাচারে জড়িত সন্দেহে সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরন দিও, সহযোগী মো. কবির এবং রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান।
হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বর প্লেট সিটিটিসি উদ্ধার করেছে। তদন্তে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলটির মালিকানা একাধিকবার বদল হয়েছে এবং ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি হোন্ডা হরনেট সিরিজের হলেও বিআরটিএর রেকর্ডে ভিন্ন মডেলের তথ্য পাওয়া গেছে। আব্দুল হান্নান আদালতে দাবি করেন, তিনি আগে মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন, তবে তার বক্তব্য যাচাই করতে গিয়ে নম্বর ও মডেল সংক্রান্ত অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ঘটনার রাতেই ফয়সাল ও আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় মানব পাচারকারী ও কিলার ফিলিপ স্নালের সহায়তায় সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে একটি কালভার্টের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে তারা দেশ ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঢাকার পুরান পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।