অনলাইন ডেস্ক
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ভারতের সহযোগিতা কামনা করেছে বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে, কেউ ইতোমধ্যে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে থাকলে তাদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রোববার দুপুরে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে কার্যকর সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি, যদি কোনো সন্দেহভাজন ইতোমধ্যে ভারতে প্রবেশ করে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু রাজনৈতিক সহিংসতা ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে, ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য, কর্মকাণ্ড বা তৎপরতা যেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত না করে, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে ভারতীয় হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয় যে, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন এবং বাংলাদেশের আদালতের দেওয়া সাজা কার্যকরের লক্ষ্যে তাদের প্রত্যর্পণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হয়ে আদালতের রায় বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি হোক।
এছাড়া, ভারতে অবস্থানরত কিছু পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়টিও বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। অভিযোগ করা হয়, এসব ব্যক্তি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা ও সংগঠনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারে। এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারত সরকারের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, পারস্পরিক আস্থা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে যৌথভাবে কঠোর অবস্থান গ্রহণ জরুরি। সীমান্ত নিরাপত্তা, অপরাধ দমন এবং বিচারিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হলে উভয় দেশই উপকৃত হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বৈঠকে জানান, ভারত বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে আগ্রহী। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে ভারত প্রস্তুত রয়েছে। একই সঙ্গে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে উত্থাপিত বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং উভয় পক্ষই পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে নিয়মিত সংলাপ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে।