নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ২০২৬কে সামনে রেখে ভোটারদের সচেতন ও ভোটাধিকার প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে ‘ভোটের গাড়ি’ শীর্ষক একটি জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে, যা পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ‘ভোটের গাড়ি’ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে।
সংশ্লিষ্ট এক সংশোধিত তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তাঁদের উপস্থিতিতে কর্মসূচির উদ্দেশ্য, কাঠামো এবং বাস্তবায়ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে।
‘ভোটের গাড়ি’ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন ও গণভোট সংক্রান্ত মৌলিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া, ভোটাধিকার প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোটারদের নিবন্ধন, ভোট প্রদান পদ্ধতি, ভোটের দিন করণীয় এবং গণভোটের তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে পরিচালিত এই কর্মসূচিতে ভ্রাম্যমাণ যান ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালানো হবে। এসব যান থেকে অডিও-ভিজ্যুয়াল বার্তা, তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনা এবং সচেতনতামূলক প্রচার সামগ্রী প্রদর্শনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে দেওয়া হবে। বিশেষ করে প্রথমবারের ভোটার, তরুণ ভোটার এবং শহরের বাইরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর কাছে তথ্য পৌঁছানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ২০২৬কে কেন্দ্র করে ভোটার উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, ভোট পদ্ধতি সম্পর্কে অনিশ্চয়তা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিভ্রান্তি অনেক সময় ভোটারদের অংশগ্রহণে প্রভাব ফেলে। এ প্রেক্ষাপটে ‘ভোটের গাড়ি’ কর্মসূচিকে একটি কার্যকর জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মাঠপর্যায়ে সরাসরি প্রচারের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হলে নির্বাচন সম্পর্কে তাদের আস্থা ও আগ্রহ বাড়তে পারে। একই সঙ্গে গণভোটের বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হলে ভোটাররা দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হবেন।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন ও গণভোটের সুষ্ঠু আয়োজনের জন্য প্রশাসনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি ভোটারদের সচেতনতা নিশ্চিত করা জরুরি। এ ধরনের প্রচার কার্যক্রম ভোটারদের তথ্যভিত্তিক অংশগ্রহণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন আচরণবিধি, ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা এবং ভোটারদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কেও বার্তা দেওয়া হবে।
সরকারের নীতিনির্ধারক মহল আশা করছে, ‘ভোটের গাড়ি’ কর্মসূচির মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে উঠবে। এই উদ্যোগের ধারাবাহিক বাস্তবায়ন নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা জোরদার করতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হতে পারে।
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ২০২৬কে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনী অবকাঠামো প্রস্তুতি এবং জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। ‘ভোটের গাড়ি’ কর্মসূচি এসব উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।