রাজনীতি ডেস্ক
চব্বিশ জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমন্বয়ক, সংসদ-সদস্য প্রার্থী এবং বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আন্দোলনের সম্মুখসারিতে থাকা কয়েকজনকে গানম্যান প্রদান করা হয়েছে এবং ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার প্রয়োজনে অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। এছাড়া আরও কয়েকজন রাজনীতিক ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান সার্বক্ষণিক গানম্যান এবং বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ সদস্য চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। অনুরূপভাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমেদ সেখ প্রমুখের জন্যও নিরাপত্তা আবেদন জমা পড়েছে।
ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শহীদ ওসমান হাদির পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। হাদির এক বোনকে লাইসেন্স এবং গানম্যান প্রদান করা হবে, আর বাকি পরিবারের সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৫ জন রাজনীতিক নিরাপত্তা, গানম্যান অথবা অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ছে এবং আরও অনেকে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছেন। রাজনীতিকদের পাশাপাশি প্রায় ২৫ জন সরকারি কর্মকর্তা অস্ত্র লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন জানান, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের নিরাপত্তা চাওয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কেউ পুলিশের সরাসরি আবেদন না করলেও এসবি, ডিএমপি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মাধ্যমে আবেদন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) রাজনৈতিক বিভাগের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তির গানম্যানের প্রয়োজন তাদের আবেদন এসবির মাধ্যমে করা হয় এবং বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী গানম্যান প্রদান করা হয়। অস্ত্র লাইসেন্সের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক বিষয়টি অনুমোদন করেন।
এসবি-এর আরেক কর্মকর্তা জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বেশ কয়েকজন নেতা—নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, তাসনিম জারা এবং ব্যারিস্টার ফুয়াদসহ—গানম্যান সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন। তাঁদের আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী গানম্যান সুবিধা প্রদান করা হবে।
অফিশিয়ালভাবে এখনও কাউকে স্থায়ী গানম্যান দেওয়া হয়নি। তবে ডিএমপি ও এসবির পক্ষ থেকে যাদের গানম্যান দেওয়া হয়েছে, তা আনঅফিশিয়ালি এবং অস্থায়ীভাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন পেলে তাদের স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই উদ্যোগ সরকারের চলমান পদক্ষেপের অংশ, যা আন্দোলন ও নির্বাচনের সময়কালীন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জনগণের নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।