1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর অভিযান: ২১ সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার, ১৩ আগ্নেয়াস্ত্র ও ১১৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার ক্যালিফোর্নিয়ার ভারী বৃষ্টি ও ঝড়: অন্তত ৩ জন নিহত, জরুরি অবস্থা ঘোষণা ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের বড়দিনের ভাষণ: কঠোর ইঙ্গিত, শান্তির শর্তভিত্তিক পরিকল্পনা আংকারার আকাশে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু দুই দেশের যৌথ টিমের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র শীত, কুয়াশা ও আংশিক মেঘলা আকাশের পূর্বাভাস বায়ুদূষণে দিল্লি শীর্ষে, ঢাকা তৃতীয় বিশ্ব বাজারে স্বর্ণ-রুপা-প্লাটিনামে মুনাফা বিক্রি, মূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে শহীদ ওসমান হাদীর খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে ৯ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তারেক রহমানের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ: গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান বিএনপি নতুন গণতন্ত্র যাত্রায় উদ্দীপনা পাচ্ছে

ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের বড়দিনের ভাষণ: কঠোর ইঙ্গিত, শান্তির শর্তভিত্তিক পরিকল্পনা

রিপোর্টার
  • আপডেট : শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ২ বার দেখা হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বড়দিন উপলক্ষে দেশবাসীকে দেওয়া বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ‘সে ধ্বংস হোক’—এমন কঠোর মন্তব্য করেছেন, যা রুশ নেতার মৃত্যুকামনার ইঙ্গিত হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। তবে সরাসরি পুতিনের নাম উচ্চারণ না করেও তিনি একই ভাষণে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান ও যুদ্ধ অবসানের শর্তভিত্তিক ২০ দফা পরিকল্পনার রূপরেখাও তুলে ধরেছেন।

জেলেনস্কি ২৪ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রকাশিত বড়দিনের প্রাক্কালের বার্তায় বলেন, রাশিয়া যতই কষ্ট চাপিয়ে দিক না কেন, ইউক্রেনীয়দের হৃদয়ের ঐক্য, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসকে তারা ধ্বংস করতে পারবে না। বক্তব্যের শুরুতেই রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন ও চলমান সংঘাতের ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের জনগণ যুদ্ধের মধ্যেও তাদের মূল্যবোধ, জাতীয় ঐক্য ও মানবিক চেতনাকে সমুন্নত রেখেছে।

বার্তায় রুশ প্রেসিডেন্টের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর সবার জন্য আমাদের একটি ইচ্ছা—‘সে ধ্বংস হোক’, যেটা সবাই মনে মনে বলে থাকে।” এই বক্তব্যকে অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক রুশ নেতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতীকী আক্রমণ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। কূটনৈতিক ভাষণে সাধারণত প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে এমন শব্দচয়ন অত্যন্ত বিরল। ফলে এটি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে উত্তেজনার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

যুদ্ধের বাস্তবতা তুলে ধরে জেলেনস্কি বলেন, বড়দিনের প্রাক্কালেও রাশিয়া আবার প্রমাণ করেছে তারা কারা। তিনি উল্লেখ করেন, ক্রিসমাসের আগের রাতে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন হামলা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণ চালানো হয়েছে। “ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে,” বলে তিনি রাশিয়ার সামরিক কৌশলের সমালোচনা করেন। তার মতে, এসব হামলা শুধুমাত্র সামরিক স্থাপনা নয়, বরং বেসামরিক নাগরিকদের জীবনযাত্রা, নিরাপত্তা, মনোবল ও দেশের অবকাঠামো ধ্বংসের উদ্দেশ্যেও পরিচালিত হচ্ছে।

ইউক্রেনের জ্বালানি, যোগাযোগ, আবাসিক অঞ্চল ও সীমান্তবর্তী জনপদে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাব বর্ণনা করে প্রেসিডেন্ট বলেন, গত তিন বছরে ইউক্রেন তার জাতীয় স্থিতিস্থাপকতা ও প্রতিরোধ সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। রাশিয়ার অব্যাহত হামলার মধ্যেও দেশটির সামরিক বাহিনী এবং সাধারণ জনগণ সম্মিলিত প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর দক্ষতা, নাগরিক প্রতিরোধ এবং প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধ কৌশলের কারণে ইউক্রেন এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

তবে কঠোর বক্তব্যের মধ্যেও জেলেনস্কি শান্তির সুর উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, “যখন আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন আমরা আরও বড় কিছু চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা তা পাওয়ার যোগ্য।” এই বক্তব্যে তিনি ইউক্রেনীয়দের যুদ্ধের লক্ষ্য যে কেবল প্রতিরোধ নয়, বরং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা—সেটি পুনর্ব্যক্ত করেন।

এদিকে বড়দিন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুদ্ধ অবসান ও কূটনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে জেলেনস্কি একটি ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রসঙ্গ আনেন। তিনি জানান, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল—বিশেষ করে দোনেৎস্ক, লুহানস্কসহ বিতর্কিত অঞ্চলের সামরিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে নমনীয় অবস্থান নিতে পারে। তবে এটি হবে শর্তসাপেক্ষ। শর্ত অনুযায়ী, রাশিয়াকেও সমানভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর ওই অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি নিরস্ত্রীকৃত (Demilitarized Zone) অঞ্চলে রূপান্তর করতে হবে। সেখানে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (OSCE) কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত শান্তিরক্ষী বাহিনীর নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেন তিনি।

শান্তি পরিকল্পনার কাঠামোতে জেলেনস্কি আরও উল্লেখ করেন—

  • ইউক্রেনের ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত অনুযায়ী সুরক্ষিত রাখতে হবে,

  • পূর্বাঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসন পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও মনিটরিং থাকতে হবে,

  • যুদ্ধবিরতির পর মানবিক করিডোর, পুনর্বাসন, অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, মাইন অপসারণ ও যুদ্ধবন্দি বিনিময় দ্রুত কার্যকর করতে হবে,

  • উভয় পক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক যাচাইকৃত নিরাপত্তা প্রটোকল চালু করতে হবে,

  • নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চলে ভারী অস্ত্র, সামরিক ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, সামরিক ঘাঁটি বা যুদ্ধ সক্ষমতা বজায় রাখার যেকোনো উপাদান নিষিদ্ধ করতে হবে,

  • শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা ও জবাবদিহি কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

জেলেনস্কির এ পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক মহল সম্ভাব্য কূটনৈতিক পথ হিসেবে বিবেচনা করলেও, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক সম্মতির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। যুদ্ধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেনা প্রত্যাহার ও নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব কার্যকর করতে আন্তর্জাতিক বাহিনীর অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা গ্যারান্টি, এবং উভয় পক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের সাম্প্রতিক ধাপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ড্রোন ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ব্যবহারে যুদ্ধ এখন উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর রূপ নিয়েছে। এর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রের পাশাপাশি তথ্যযুদ্ধ, কূটনৈতিক চাপ, আন্তর্জাতিক সহায়তা, সামরিক রসদ সরবরাহ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক জনমত—সবই এ সংঘাতের অংশ হয়ে উঠেছে। জেলেনস্কির বড়দিনের ভাষণ ও শান্তি পরিকল্পনা এ যুদ্ধের কৌশলগত ও কূটনৈতিক মাত্রাকে আরও স্পষ্ট করেছে।

তার বক্তব্য একদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের অনমনীয় রাজনৈতিক অবস্থান, প্রতিরোধ মনোভাব ও জনমতকে শক্তিশালী করেছে, অন্যদিকে শর্তভিত্তিক সেনা প্রত্যাহার ও নিরস্ত্রীকরণ প্রস্তাবের মাধ্যমে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার দ্বারও খোলা রেখেছে। আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখন মস্কোর প্রতিক্রিয়া, সম্ভাব্য মধ্যস্থতা উদ্যোগ এবং যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com