1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
বায়ুদূষণে দিল্লি শীর্ষে, ঢাকা তৃতীয় বিশ্ব বাজারে স্বর্ণ-রুপা-প্লাটিনামে মুনাফা বিক্রি, মূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে শহীদ ওসমান হাদীর খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে ৯ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তারেক রহমানের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ: গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান বিএনপি নতুন গণতন্ত্র যাত্রায় উদ্দীপনা পাচ্ছে তারেক রহমানের আগমন দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধাপ তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন: হাসনাত আব্দুল্লাহ মনোনয়ন না পেলে আগেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছি : রুমিন ফারহানা তারেক রহমান এভারকেয়ার হাসপাতালে, চিকিৎসাধীন মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষে ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

বায়ুদূষণে দিল্লি শীর্ষে, ঢাকা তৃতীয়

রিপোর্টার
  • আপডেট : শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৫ বার দেখা হয়েছে

আবহাওয়া ডেস্ক

বিশ্বের ১২৭টি প্রধান শহরের বায়ুগুণমান সূচকের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দূষণের দিক থেকে শীর্ষে উঠে এসেছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। একই তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান তৃতীয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ নগরীগুলোর পরিবেশগত ঝুঁকির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ১৩ মিনিটে হালনাগাদ এ সূচক প্রকাশ করে। সূচক অনুযায়ী, দিল্লির বায়ুগুণমান স্কোর ৩৪২, যা আইকিউএয়ারের মানদণ্ডে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘hazardous’ পর্যায়ে পড়ে। এর অর্থ হলো, এই শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাধারণ জনগণসহ সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘসময় বাইরে অবস্থান করলে তা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৩৭ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। লাহোরের বাতাসও ‘দুর্যোগপূর্ণ’ মানদণ্ডে শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। ২৪৮ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসা ঢাকার বাতাসকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ (Very Unhealthy) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইভাবে ২৩০ স্কোরে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে কাতারের রাজধানী দোহা এবং ২৩০ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে ভারতের কলকাতা। দোহা ও কলকাতার বায়ুমানও ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুসারে, বায়ুগুণমান স্কোর ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ (Good) বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ স্কোর হলে তা ‘মাঝারি’ বা ‘সহনীয়’ (Moderate), ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ (Unhealthy for Sensitive Groups), ১৫১ থেকে ২০০ স্কোর পর্যন্ত ‘অস্বাস্থ্যকর’ (Unhealthy), ২০১ থেকে ৩০০ স্কোর পর্যন্ত ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ (Very Unhealthy) এবং ৩০১-এর বেশি স্কোর হলে তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ (Hazardous) হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হয়। সে অনুযায়ী, বর্তমানে তালিকার শীর্ষ দুই শহর দিল্লি ও লাহোর ৩০১-এর বেশি স্কোরের কারণে সরাসরি ‘দুর্যোগপূর্ণ’ শ্রেণিতে পড়েছে, আর ঢাকা, দোহা ও কলকাতা ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে স্কোরের কারণে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে অবস্থান করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ, হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যানসারসহ একাধিক জটিল অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং যাদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি বা হৃদরোগের সমস্যা আছে, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। দূষিত বাতাসে থাকা ক্ষুদ্র বস্তুকণা বিশেষ করে PM2.5 (২.৫ মাইক্রোমিটারের কম ব্যাসের কণা) ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

দিল্লির বায়ুদূষণ দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় থাকলেও শীত মৌসুমে এই দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বছরের এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধি, তাপমাত্রা হ্রাস, বাতাসের গতি কমে যাওয়া এবং ইনভার্সন লেয়ারের (বায়ুমণ্ডলের উষ্ণ স্তর যা দূষণকে নিচে আটকে রাখে) প্রভাবে দূষণ কণা সহজে উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। ফলে তা দীর্ঘসময় শহরের নিম্নস্তরে আটকে থাকে এবং দূষণমাত্রা বিপদসীমা অতিক্রম করে। দিল্লির ক্ষেত্রে শিল্পকারখানার নির্গমন, নির্মাণকাজের ধুলা, ইটভাটার ধোঁয়া, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, বর্জ্য পোড়ানো এবং শীতকালে কৃষিজমির খড়কুটা পোড়ানোর মতো কার্যক্রম দূষণ বৃদ্ধির প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত।

অন্যদিকে, ঢাকার বায়ুদূষণের পেছনেও প্রায় একই ধরনের কারণ সক্রিয়। বিশেষ করে রাজধানীতে চলমান অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ইটভাটার ধোঁয়া, যানবাহনের দূষণ, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য পোড়ানো, খাল ও নদীদূষণ থেকে সৃষ্ট গ্যাসীয় উপাদান, ধুলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থার ঘাটতি এবং সবুজ আচ্ছাদনের স্বল্পতা ঢাকার বাতাসকে দিন দিন অস্বাস্থ্যকর করে তুলছে। ঢাকা শহরের বায়ুমান গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে শীত মৌসুমে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বা ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে থাকছে, যা নগরবাসীর জন্য উদ্বেগের বিষয়।

লাহোরও শীতকালে মারাত্মক দূষণের কবলে পড়ে। পাকিস্তানের এই শহরে যানবাহন নির্গমন, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, ইটভাটার নির্গমন এবং ধুলাবালু প্রধান দূষণ উৎস হিসেবে চিহ্নিত। দোহা এবং কলকাতার ক্ষেত্রেও যানবাহনের নির্গমন, শিল্প নির্গমন, ধুলা, এবং বর্জ্য পোড়ানোর মতো কার্যক্রম বায়ুমানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ স্তরে নিয়ে গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নির্ধারিত নিরাপদ বায়ুমান মানদণ্ড অনুযায়ী, দীর্ঘসময় PM2.5–এর উচ্চমাত্রার সংস্পর্শ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যদিও আইকিউএয়ারের সূচক শহরভিত্তিক বায়ুগুণমানের তাৎক্ষণিক চিত্র প্রদান করে, তবু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সূচক সরকার, নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ সংস্থা এবং নাগরিকদের জন্য দূষণ মোকাবিলায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।

বায়ুদূষণ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে নীতি, প্রযুক্তি ও নাগরিক উদ্যোগ একসঙ্গে কাজ করছে। উন্নত শহরগুলোতে নির্মাণস্থলে পানি ছিটানো, ধুলা আটকাতে নেট ব্যবহার, বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধকরণ, যানবাহনের নির্গমন মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহনের ব্যবহার বৃদ্ধি, ইটভাটার আধুনিকায়ন, শিল্প নির্গমন পর্যবেক্ষণে সেন্সরভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার, শহরে বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়ন, দূষণকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, ইলেকট্রিক যানবাহনের প্রসার, এবং বায়ুশোধনকারী টাওয়ার বসানোর মতো উদ্যোগ দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কঠোর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ইটভাটার দূষণ কমাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, নির্মাণস্থলের ধুলা নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলক নীতি, পুরোনো যানবাহন পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া, গণপরিবহন ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, শহরে সবুজ আচ্ছাদন বৃদ্ধি, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক সমাধান বাস্তবায়ন করা জরুরি। একইসঙ্গে নাগরিক পর্যায়েও মাস্ক ব্যবহার, অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া, শিশু ও বয়স্কদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

আইকিউএয়ারের সূচক প্রকাশের পর পরিবেশকর্মী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নগরবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে যেসব শহরে বায়ুগুণমান ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে, সেসব শহরের নাগরিকদের যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে অবস্থান, জানালা বন্ধ রাখা, এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার, বাইরে গেলে মানসম্মত মাস্ক (N95/KN95) ব্যবহার, এবং শারীরিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে চলাফেরা সীমিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বায়ুদূষণ এখন আর কেবল পরিবেশগত সংকট নয়, এটি সরাসরি জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কর্মক্ষমতা, শিশু বিকাশ এবং নগর ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুতর বহুমাত্রিক ঝুঁকি। দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোতে দূষণের এমন মাত্রা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই নগরায়ণ ও পরিবেশ সুরক্ষায় সমন্বিত, বৈজ্ঞানিক এবং কঠোর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com