জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শহীদ ওসমান হাদীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার, দেশের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং গণভোটে ‘জুলাই সনদ’-এর পক্ষে জনমত তৈরির লক্ষ্যে ৯ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির পুরানা পল্টন কার্যালয়ে ২৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকালে অনুষ্ঠিত নিয়মিত কেন্দ্রীয় বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সংগঠনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই–এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতৃবৃন্দ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, রাজনৈতিক মাঠে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৯ জানুয়ারি শুক্রবার রাজধানীতে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে পীর সাহেব চরমোনাই ওসমান হাদী হত্যার বিচার–প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির অভাব এবং হত্যায় জড়িত অপরাধীদের এখনো আইনের আওতায় না আনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লব–পরবর্তী বাংলাদেশে মানুষের প্রত্যাশা ছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কিন্তু শহীদ ওসমান হাদীর হত্যার প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার না হওয়া জনগণের সেই প্রত্যাশাকে ব্যাহত করছে।”
সংগঠনের নেতারা জানান, এই মহাসমাবেশ শুধু একটি হত্যার বিচার–দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং দেশের নিরাপত্তা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহাবস্থান এবং গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংস্কার–সনদ ‘জুলাই সনদ’–এর প্রতি জনগণের সমর্থন তৈরির লক্ষ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তারা দাবি করেন, জুলাই বিপ্লবের পর দেশ নতুন করে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের দিকে এগোচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জুলাই সনদ জনগণের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রণীত হয়েছে।
বৈঠকে সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, “দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হয়নি। প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও মতের মানুষের সমানভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাস–নির্মূল এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। যদি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করা হয়, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে।”
সংগঠনের সহকারী মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা অপরাধের বিচার ঝুলে থাকবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা।”
বৈঠকে রাজনৈতিক সহাবস্থান, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং গণভোটের পরিবেশ তৈরির বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সংগঠনের নেতারা বলেন, “গণভোটে জনগণের মতামত স্বাধীনভাবে প্রতিফলিত হওয়ার জন্য একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং ভীতিমুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। জনগণের ভোটাধিকার যাতে কোনোভাবেই প্রভাবিত না হয়, সে জন্য প্রশাসন, আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, কে এম আতিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ইফতেখার তারিকসহ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নীতি–নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। নেতারা একমত হন যে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেই ভূমিকা কার্যকরভাবে পালনের জন্য রাষ্ট্রকেও সমান সুযোগ, নিরপেক্ষ আচরণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা বলেন, “জুলাই সনদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র–সংস্কারের একটি গণ–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এটি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, বরং জনগণের সম্মিলিত প্রত্যাশার দলিল। তাই আমরা গণভোটে এই সনদের পক্ষে দেশব্যাপী জনমত তৈরি করব, যাতে জনগণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
বৈঠক শেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মহাসমাবেশে শহীদ ওসমান হাদীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার–প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, রাজনৈতিক দলগুলোর সমান সুযোগ নিশ্চিত, এবং গণভোটে জুলাই সনদের পক্ষে জনসমর্থন বৃদ্ধির দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।
সংগঠনটির নেতারা আরও জানান, কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা দেশের প্রতিটি জেলা–মহানগর এবং থানা–ইউনিটে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সমাবেশকে ঘিরে ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশব্যাপী রাজনৈতিক মাঠে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনটি আশা করছে, এই মহাসমাবেশ দেশের আইন–শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং গণভোটের পরিবেশ তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ গণ–আন্দোলনের রূপ নেবে।