জাতীয় ডেস্ক
দেশের মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন এ তালিকায় আগের বছরের তুলনায় মোট ১২ দিন ছুটি কমানো হয়েছে। পাশাপাশি পবিত্র রমজান মাসে দুই সপ্তাহ বিদ্যালয় খোলা রেখে পাঠদান চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষক সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, সিলেবাস যথাসময়ে সম্পন্ন এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষভিত্তিক পাঠদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ছুটি কমানোর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) মাউশির কর্মকর্তারা জানান, বছরের মোট কার্যদিবস বাড়ানো ছাড়া পাঠ্যসূচি শেষ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছিল, সে কারণেই রমজান মাসে আংশিক ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত এসেছে।
তবে মাঠপর্যায়ের অনেক শিক্ষক এ সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, রোজা রেখে পূর্ণমাত্রায় পাঠদান করা বাস্তবসম্মত নয়। শিক্ষকরা বলছেন, পুরো রমজান মাসই ছুটি রাখা হলে তা শিক্ষার্থীদের জন্যও সহনীয় হতো। তাঁদের অভিযোগ, নীতিনির্ধারণে শিক্ষকদের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেনি।
মাউশির এক কর্মকর্তা জানান, বছরে মোট ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৫২টি শুক্রবার ও ৫২টি শনিবার মিলিয়ে ১০৪ দিন স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ থাকে। এর সঙ্গে জাতীয়, ধর্মীয় ও অন্যান্য দিবস মিলিয়ে আরও ৬৪ দিন ছুটি যুক্ত হলে মোট ছুটি দাঁড়ায় ১৬৮ দিন। এ ছাড়া তিনটি প্রধান পরীক্ষা বছরে ১২ দিন করে মোট ৩৬ দিন নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ২০৫ দিন শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এর বাইরে বই বিতরণ, মিলাদ মাহফিল, বিদায় অনুষ্ঠানসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার কারণে কার্যকর পাঠদানের দিন আরও কমে আসে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে বছরে ১৫০ দিনেরও কম সময় নিয়মিত ক্লাস হয়।
এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই ছুটির সংখ্যা কমানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাউশির ওই কর্মকর্তা বলেন, অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে এবং সিলেবাস শেষ করতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমানো ও রমজানে দুই সপ্তাহ ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রকাশিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের অর্ধ-বার্ষিক বা প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৮ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত। এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে ২৯ জুলাই। নির্বাচনী পরীক্ষা নির্ধারিত হয়েছে ২৮ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, যার ফল প্রকাশের সময়সীমা ১৮ নভেম্বর। বার্ষিক পরীক্ষা চলবে ১৯ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে।
ছুটির তালিকায় আরও দেখা গেছে, মোট ৬৪ দিনের ছুটির মধ্যে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে একটানা ১৯ দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। এর সঙ্গে জুমাতুল বিদা, স্বাধীনতা দিবসসহ কয়েকটি ছুটি যুক্ত হয়ে এই দীর্ঘ ছুটি ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে। শুক্রবার ও শনিবার মিলিয়ে বিদ্যালয় পুনরায় খুলবে ২৯ মার্চ।
ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি একত্রে ১২ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলবে ২৪ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত। এরপর সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ৭ জুন থেকে বিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হবে। উল্লেখ্য, আগের বছর এই ছুটির মেয়াদ ছিল ১৫ দিন।
ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি রাখা হয়েছে। এর বাইরে লক্ষ্মীপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে এক দিন করে ছুটি থাকবে। ফাতেমা ই ইয়াজ দাহম উপলক্ষেও এক দিনের ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে সংরক্ষিত দুই দিনের ছুটি রাখা হয়েছে, যা গত বছর ছিল তিন দিন। এর বাইরে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সরকারি বিধি অনুযায়ী ছুটি বহাল থাকবে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ছুটি কমানোর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে কার্যকর পাঠদান নিশ্চিত করতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় আরও সুসমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।