রাজনীতি ডেস্ক
ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে পরিবারের পোষা বিড়াল ‘জেবু’কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি জেবুকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল দেখে বিস্ময় ও আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করেন। পোস্টে উঠে এসেছে পরিবারে পোষা প্রাণীর প্রতি গভীর মমতা, দায়িত্ববোধ, দেশান্তরের অভিজ্ঞতা ও আবেগঘন স্মৃতি।
জাইমা রহমান লিখেছেন, “জেবুকে ঘিরে এত কৌতূহল দেখে আমি কিছুটা অবাক, আবার মজাও পাচ্ছি। ভাবছি, ও যদি বিষয়টা বুঝতে পারত!”—এই বাক্যেই বোঝা যায়, পোস্টটি সাধারণ ব্যক্তিগত অনুভূতি হলেও তা দ্রুতই পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। পোস্টের শুরুতেই তিনি প্রাণী লালন-পালনের দায়িত্বকে ‘বড় দায়িত্ব’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং জেবুকে আল্লাহর সৃষ্টি এক জীব হিসেবে সম্মান করার কথা বলেন।
পোস্টে জাইমা রহমান বর্ণনা করেন, ছোট্ট বিড়ালছানা হিসেবে জেবুকে প্রথম যখন বাসায় আনা হয়েছিল, তখন তিনি কল্পনাও করেননি যে এই প্রাণীটি একসময় পরিবারের অপরিহার্য সদস্যে পরিণত হবে। তিনি জানান, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জেবুর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাবা-মা বাসায় ফিরেই আগে জেবুর খোঁজ নিয়েছেন, পরে মেয়ের। এই তথ্যটি নিছক মজার স্মৃতি মনে হলেও তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করে—মানুষ ও পোষা প্রাণীর সম্পর্ক কতটা নির্ভরতা ও পারিবারিক বন্ধনে রূপ নিতে পারে।
জাইমা পোস্টে তাঁর মায়ের বাগান করা কিংবা পাড়ায় হাঁটার অভ্যাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন, যেখানে জেবু মায়ের চারপাশে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরত। তিনি আরও জানান, সন্ধ্যায় তারেক রহমানের অনলাইন মিটিংগুলো শেষ হওয়া পর্যন্ত জেবু বাবার কোলে চুপটি করে বসে থাকত এবং মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার আদর উপভোগ করত। এই দৃশ্যগুলো পাঠকের কাছে ব্যক্তিগত হলেও তা বৃহত্তর সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গেও মিলে যায়—বিশেষ করে ডিজিটাল যুগে ঘরে বসে অনলাইন মিটিং চলাকালে পোষা প্রাণীর সঙ্গ মানুষের নিঃসঙ্গতা ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
পোস্টে জাইমা রহমান নিজের সঙ্গে জেবুর সম্পর্কের দিকটিও আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, জেবু যেন সব সময় তাঁর মনের অবস্থা বুঝে ফেলত এবং তার ছোট্ট পা কিংবা কোমল ছোঁয়ার মাধ্যমে সঙ্গ দিত। পোষা প্রাণীর ‘অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা’ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও বলা হয়েছে, প্রাণী মানুষের আচরণ, গলার স্বর, শারীরিক ভাষা ও মনস্তাত্ত্বিক সংকেত অনুধাবন করতে পারে। এই বর্ণনা তাই শুধু ব্যক্তিগত স্মৃতি নয়, বরং পোষা প্রাণীর সঙ্গে মানুষের মানসিক বন্ধনেরও একটি বাস্তব প্রতিফলন।
জাইমা পোস্টে পরিবারসহ দেশান্তরের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি জানান, জেবু ‘মহাদেশ পেরিয়ে নতুন দুনিয়ায় এসেছে’ এবং এই পরিবর্তন তার ছোট্ট প্রাণের জন্য অনেক বড় ও কষ্টের, যা মানুষ পুরোপুরি অনুধাবনও করতে পারে না। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বসবাসরত অনেক পরিবারকেই পোষা প্রাণী নিয়ে ভ্রমণ ও বাসা বদলের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। দীর্ঘ ভ্রমণে প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশের পরিবর্তন, শব্দ, তাপমাত্রা ও মানসিক চাপের মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস ও পশু পরিবহন নীতিমালা অনুযায়ী, পোষা প্রাণীকে বিদেশে নিতে হলে স্বাস্থ্য সনদ, টিকা, কোয়ারেন্টিন নীতি, নিরাপদ ক্যারিয়ার, ভ্রমণকালীন যত্ন ও বিশেষ অনুমতির মতো একাধিক ধাপ নিশ্চিত করতে হয়। তাই জাইমার এই মন্তব্য বাস্তবসম্মত ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।
জাইমা রহমান লিখেছেন, “জেবুর মাধ্যমে আমাদের অনেকেই ধৈর্য শিখেছে, বড়-ছোট সব প্রাণীর প্রতি মমতা শিখেছে, আর ভাষা এক না হলেও একে অন্যকে ভালোবাসা আর যত্ন নেওয়ার সৌন্দর্য বুঝেছে। কারণ ভালোবাসা তো প্রজাতির সীমা মানে না।” এই বক্তব্যে উঠে এসেছে আন্তঃপ্রজাতিক সম্পর্কের নৈতিক ও আবেগিক সৌন্দর্য। মনোবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানে পোষা প্রাণীর সঙ্গে বেড়ে ওঠাকে ‘সহানুভূতি ও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা’ বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়। শিশুরা প্রাণীর প্রতি যত্ন নিতে গিয়ে ধৈর্য, দায়িত্বশীলতা, রুটিন, সংবেদনশীলতা ও নিঃশর্ত ভালোবাসার শিক্ষা লাভ করে, যা পরবর্তী জীবনে সামাজিক আচরণেও প্রভাব ফেলে।
পোস্টের শেষাংশে তিনি জেবুর স্বভাবগত ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন, যা ইতোমধ্যেই পাঠকের কৌতূহলের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “ও কখনো ‘মিউ মিউ’ করে না! একদমই না। আলমারিতে আটকে গেলেও না। খুশি বা অবাক হলে পাখির মতো নরম করে ডাক দেয়। অনুমতি ছাড়া কোলে নিলে বিরক্তিতে গোঁ গোঁ করে। আর যেসব বিড়াল ওর পছন্দ না, তাদের দিকে বেশ জোরেই চিৎকার করে!”
এই অংশটি ডিজিটাল কনটেন্টের জন্যও অত্যন্ত কার্যকর। কারণ সামাজিক মাধ্যমে প্রাণীর অদ্ভুত ও মানবিক বৈশিষ্ট্যের গল্প দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষের আবেগ ও বিনোদন—দুই জায়গাতেই প্রভাব ফেলে। জেবুর ‘পাখির মতো ডাক’ কিংবা ‘মিউ না করা’ বৈশিষ্ট্যটি পোস্টে নতুনত্ব যোগ করেছে এবং পাঠককে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গল্পে যুক্ত করেছে।