1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যার মূল চালক গ্রেপ্তার, র‍্যাবের অভিযান সফল সীমান্তে সবসময় মাদক এবং চোরাচালান প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রামে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা, আসন পরিবর্তন ও নতুন মনোনয়ন বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই তাসনিম জারার ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মনোনয়নপত্র জমা পাকিস্তানি উপস্থাপিকা ও তারকা অতিথি জিয়াউল হক পলাশের চমকপ্রদ মুহূর্ত ময়মনসিংহে রেলপথে ঢাকাগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের দুটি বগি লাইনচ্যুত তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ‘কনকন’: ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতের দাপট অব্যাহত জাইমা রহমানের ফেসবুক পোস্টে উঠে এলো পরিবারের পোষা বিড়াল ‘জেবু’র হৃদয়ছোঁয়া গল্প ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ১২ দিন কমলো, রমজানে ক্লাস রাখার সিদ্ধান্ত

তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ‘কনকন’: ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতের দাপট অব্যাহত

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৪ বার দেখা হয়েছে

আবহাওয়া ডেস্ক

ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর—শীতের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি আচ্ছন্ন থাকার মধ্যেই দেশজুড়ে নতুন করে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ‘কনকন’ প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) এক বিশেষ পূর্বাভাস বার্তায় জানায়, শৈত্যপ্রবাহটি ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অথবা ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর প্রভাব ইতোমধ্যে অনুভূত হতে শুরু করেছে এবং আগামী দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিডব্লিউওটি-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে এই শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। এ সময় রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। এছাড়া দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ৭ থেকে ৯ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করতে পারে বলে জানানো হয়।

আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ বিশ্লেষকদের মতে, এবারের শীত মৌসুমে শৈত্যপ্রবাহের ধরণ আগের বছরের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী ও ঘন ঘন হতে পারে। বিশেষ করে নদী অববাহিকা ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে রাতের তাপমাত্রা দ্রুত নেমে আসার কারণে শীতজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়, শৈত্যপ্রবাহ শুরুর প্রথম ২–৩ দিন দেশজুড়ে ঘন কুয়াশার দাপট বেশি থাকবে। পরে কুয়াশা কিছুটা কমে দিনের বেলায় রোদের দেখা মিলতে পারে, তবে রাতে কনকনে ঠান্ডা অব্যাহত থাকবে।

রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগেও শৈত্যপ্রবাহ সক্রিয় থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এসব অঞ্চলে ঠান্ডার দাপট বাড়লেও রাজশাহী–খুলনার মতো তীব্রতা তুলনামূলক কম থাকতে পারে। সিলেট, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জসহ কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৯ থেকে ১০ ডিগ্রির ঘরে নামার সম্ভাবনার কথা জানায় বিডব্লিউওটি। এদিকে রাজধানী ঢাকা ও উপকূলীয় এলাকায় সরাসরি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। এসব এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।

বিশ্লেষকরা জানান, শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে শীতজনিত রোগ—বিশেষ করে নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, সর্দি–কাশি, জ্বর ও অ্যাজমার প্রকোপ বাড়তে পারে। শিশু ও বয়স্করা এ সময় বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উষ্ণ পোশাক ব্যবহারের পাশাপাশি সকাল ও রাতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া গরম পানি পান, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, শুষ্ক ত্বকের যত্ন, এবং ধুলা–ধোঁয়া এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে।

দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র শীত ও কুয়াশা আলু, বোরো ধান, শীতকালীন সবজি ও সরিষার মতো ফসলের ওপর মিশ্র প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে কিছু ফসলে শীত উপকারী হলেও অতিরিক্ত ঠান্ডা ও সূর্যালোক কমে গেলে চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিকাজের গতি ধীর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি খেটে–খাওয়া মানুষের কর্মঘণ্টাও কমে যেতে পারে, যা দৈনিক আয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে ঘন কুয়াশা সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ট্রাফিক বিশেষজ্ঞরা এ সময় যানবাহন ধীরগতিতে চালানো, ফগ লাইট ব্যবহার, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, এবং মহাসড়কে অপ্রয়োজনীয় ওভারটেক না করার পরামর্শ দিয়েছেন। নৌ–যোগাযোগে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীপথে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় ফেরি, লঞ্চ ও কার্গো চলাচলে ধীরগতি ও সময়সূচি বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। দেশের প্রধান নদী অববাহিকাগুলো—পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী এলাকাগুলোতে কুয়াশার প্রভাব বেশি অনুভূত হয়।

গ্রামীণ ও আধা–শহুরে এলাকায় শীতের প্রভাব তুলনামূলক বেশি অনুভূত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ঘরবাড়ির অবকাঠামোগত দুর্বলতা, উন্মুক্ত পরিবেশ, এবং পর্যাপ্ত শীত–সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনগুলো শীতার্তদের মধ্যে কম্বল, শীতবস্ত্র ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করার কথা জানালেও প্রয়োজনের তুলনায় সহায়তা এখনও সীমিত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

বিডব্লিউওটি-এর বার্তায় বলা হয়, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব তুলনামূলক কম থাকতে পারে। তবে শীতের সাধারণ অনুভূতি সেখানেও বজায় থাকবে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প ও সমুদ্রের তাপমাত্রার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ সরাসরি প্রবেশ করতে না পারলেও ‘উইন্ড চিল ইফেক্ট’-এর কারণে ঠান্ডা বেশি অনুভূত হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে শীত ও গ্রীষ্ম—দুই মৌসুমেই চরম আবহাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা ও দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ এবং গ্রীষ্মে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠছে। পরিবেশ গবেষকদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, মৌসুমি বায়ুর গতি–প্রকৃতির পরিবর্তন, এবং আঞ্চলিক বায়ুদূষণ—এসব মিলিয়ে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ আরও প্রকট হচ্ছে। শীতের সময় বায়ু ভারী ও স্থির হয়ে পড়ায় দূষিত কণাগুলো বায়ুমণ্ডলে দীর্ঘসময় আটকে থাকে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।

আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতে, চলমান শীত মৌসুমে পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সতর্কতা বার্তা জারি করা হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের শীতজনিত জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা রয়েছে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com