অর্থনীতি ডেস্ক
২০২৫ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আবারও বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশাজনক অবস্থার শিকার হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দেশের শেয়ারবাজারের পারফরম্যান্স সবচেয়ে কম রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এ বছর ৬.৭৩ শতাংশ কমে ৪,৮৬৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের ৫,২১৬ পয়েন্টের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর বাজারের তুলনায় বাংলাদেশের অবনতি স্পষ্ট। পাকিস্তানের কেএসই সূচক ৪৫.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১,০৪,৭৩৪ পয়েন্টে পৌঁছেছে, শ্রীলঙ্কার সিএসইঅল সূচক ৪০.৭৭ শতাংশ বেড়ে ২২,৪৪৬ পয়েন্টে পৌঁছেছে, এবং ভারতের বিএসই সেনসেক্স সূচক ৮.৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮,৭৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
যদিও সূচক কমেছে, তবুও বাজার মূলধন ২.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬,৭৮,৬২০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন এ বছর কমেছে ৫২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকায়, যা আগের বছরের ৬৩১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার তুলনায় ১৫.৭১ শতাংশ হ্রাস।
বছরের শুরুতে জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন, পূর্ববর্তী অনিয়ম ও দুর্নীতি কমিয়ে শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাস্তবে, সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা যায়নি, এবং জরিমানা আদায়ও কার্যকর হয়নি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে অংশীজনদের দূরত্ব এবং সংস্কার উদ্যোগের সীমাবদ্ধতা এ বছরের বাজারে আস্থা তৈরি করতে পারেনি। পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও তেমন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। কেবল মার্জিন রুলস এবং মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ বছর কিছু নেতিবাচক ঘটনা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করেছে। পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের লেনদেন বাজার থেকে স্থগিত করা হয়েছে, এবং আটটি তালিকাভুক্ত ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সর্বমোট, ২০২৫ সালের পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বিগত তিন বছরের মতো এ বছরও বাজারের পারফরম্যান্স ও আস্থা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে, এবং দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আরও পিছিয়ে রেখেছে।