আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরান তার পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে কানাডার রয়্যাল কানাডিয়ান নেভি বা নৌবাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি কানাডার ২০২৪ সালে ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার জবাব। তবে নৌবাহিনীটি কী ধরনের প্রভাব বা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হবে তা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করা আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতির পরিপন্থী ছিল। ‘পারস্পরিকতার নীতি’ অনুসারে কানাডার নৌবাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তে ইরান ও কানাডার সম্পর্কের চলমান কাঠামোর মধ্যে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ১৯ জুন কানাডা আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। ওই ঘোষণার মাধ্যমে আইআরজিসি এবং এর সদস্যদের কানাডায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, কানাডার নাগরিকদের জন্য এই সংগঠন বা এর সদস্যদের সঙ্গে যেকোনো লেনদেন করা অবৈধ করা হয়েছে। এছাড়া, কানাডায় আইআরজিসি বা এর সদস্যদের কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দের বিধানও চালু করা হয়েছে।
আইআরজিসিকে তালিকাভুক্ত করার পেছনে ২০২০ সালের পিএস৭৫২ ফ্লাইট দুর্ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। জানুয়ারিতে তেহরান থেকে উড়ার পরপরই ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বিমানটি ভূপাতিত হয়, যাতে ১৭৬ জন আরোহী ও ক্রু নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৮৫ জন কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার পর আইআরজিসি স্বীকার করেছিল, তারা ভুলবশত বিমানটিকে শত্রু লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ভূপাতিত করেছে।
কানাডা-ইরান সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ সময় ধরে উত্তেজনাপূর্ণ। ২০১২ সালে কানাডা ইরানকে ‘বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে এবং অস্ট্রেলিয়া কিছু মাস আগে আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে।
নতুন এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের এই ঘোষণার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে কানাডার নৌবাহিনী বা সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা বা প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
ইরান ও কানাডার মধ্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে সঙ্কটপূর্ণ। বিশেষ করে সামরিক, অর্থনৈতিক ও বিমান নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব লক্ষ্য করা গেছে। এবার নৌবাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করায় দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক যোগাযোগ ও ভবিষ্যত সহযোগিতার উপর প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।