জাতীয় ডেস্ক
ঢাকা, ৩০ অক্টোবর ২০২৫: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নতুন ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ জারি করেছে। এই নীতিমালা কেবল দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং ভোটারদের আস্থা বৃদ্ধি করা।
নতুন নীতিমালার মূল লক্ষ্য হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যদি কোনো ত্রুটি বা অনিয়ম ঘটে, তা শনাক্ত করা। এ ছাড়া, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আস্থা বাড়ানো এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে এর প্রয়োগ করা হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর জন্য নির্বাচন কমিশন দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। এই বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত ফরম (EO-1) সহ প্রয়োজনীয় দলিলপত্র জমা দেওয়ার জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য আবেদন করার শর্ত হলো তারা গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে এবং তাদের নিবন্ধিত গঠনতন্ত্রে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির অঙ্গীকার থাকতে হবে।
নিবন্ধন পেতে হলে কোনো সংস্থার প্রধান নির্বাহী বা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট না হতে হবে। রাজনৈতিক দল বা তার অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত কেউ যদি সংস্থার পরিচালনায় যুক্ত থাকেন, তবে সে সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। এছাড়া, নামের মিল বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন নাম ব্যবহার করলেও নিবন্ধন বাতিল হতে পারে।
প্রতিটি সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ পাঁচ বছর হবে। পাঁচ বছর পর শর্ত সাপেক্ষে এটি নবায়ন করা যাবে। নিবন্ধন প্রাপ্তির পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে, সংস্থাগুলোর জন্য কমপক্ষে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের চারটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা থাকবে। প্রতিটি সংস্থাকে প্রতি দুই বছর পর দ্বি-বার্ষিক প্রতিবেদনও জমা দিতে হবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে মনোনীত হওয়ার জন্য যে কেউ লিখিত যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে। যোগ্যতার শর্ত হিসেবে, তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে, এবং সর্বনিম্ন উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস হতে হবে। এক্ষেত্রে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা যাবে না এবং ভোটার হিসেবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করাও অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে।
নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনো সংস্থা যদি নীতিমালা লঙ্ঘন করে বা রাষ্ট্র বা শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকে, তবে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে, কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
এভাবে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় একটি নতুন শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।