জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে এক অবিচ্ছেদ্য সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এসব দুর্ঘটনা শুধু ব্যক্তি ও পরিবারকেই নয়, গোটা সমাজ এবং দেশের অর্থনীতি উপরে গভীর প্রভাব ফেলছে। বিএনপির সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এক আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেছেন।
আজ (বৃহস্পতিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আয়োজিত ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকল মতপক্ষের রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা জরুরি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কাদের গনি। তিনি বলেন, প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর খবর বা তাদের আহত হওয়ার ঘটনা চোখে পড়ে।
বিএনপির নেতার ভাষায়, সড়ক দুর্ঘটনা এ দেশের জন্য এক মহা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ৩৮০ জন। তবে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিশেষত, সেপ্টেম্বর মাসেই ৪৪৬টি দুর্ঘটনায় ৪১৭ জন নিহত হয়েছেন এবং ৬৮২ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ওয়ার্ল্ড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা হতে পারে, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় দেড় শতাংশ। এই পরিসংখ্যানগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন নয়। কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী নিহতদের পরিবার ৫ লাখ টাকা, অঙ্গহানি হওয়া ব্যক্তির জন্য ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহতদের সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা সহায়তা পাওয়ার কথা। তবে দুর্ঘটনার পর ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়, যা অনেক পরিবারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, এই সময়সীমা ৯০ দিন করা হোক।
এছাড়া কাদের গনি চৌধুরী অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন-করিমনের চলাচল বেড়ে গেছে, যা রাস্তায় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ২০১৭ সালে হাইকোর্ট এসব যানবাহন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল, তবুও এখনো এই যানবাহনগুলো সড়কে চলাচল করছে। এর ফলে হঠাৎ করে গলির ভিতর থেকে হাইওয়েতে উঠে আসা এসব যান দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
পরিবহন খাতে এখনো শিল্পের মর্যাদা না দেওয়ার কারণে চালকদের নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা, বেতন এবং ভাতা নির্ধারিত নয়। ট্রিপ ভিত্তিক আয় হওয়ায় চালকরা অতিরিক্ত কাজ করেন এবং অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে যান, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। কাদের গনি আরো বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার, পরিবহন মালিক, চালক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নাগরিক সমাজের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।
কাদের গনি চৌধুরী সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপের প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ, রোড ডিভাইডার স্থাপন, রাস্তা মেরামত, ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, এখনই এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সবশেষে, তিনি সড়ক দুর্ঘটনার দিকে যথাযথ মনোযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এর মাধ্যমে দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করার সম্ভবনা উন্মুক্ত হবে।