স্বাস্থ্য ডেস্ক
শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে (হাইপারইউরিসেমিয়া) তা ধীরে ধীরে জয়েন্ট ও কিডনির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। চিকিৎসা ও জীবনযাপনের পরিবর্তনের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এই অবস্থার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পুষ্টিবিদদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট ফল প্রাকৃতিকভাবে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস, প্রদাহ কমানো এবং শরীরের ডিটক্স প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিক অ্যাসিড শরীরে পিউরিন নামক যৌগের বিপাকক্রিয়ার ফলে তৈরি হয়। যখন এই অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে যথাযথভাবে নির্গত হতে পারে না, তখন তা রক্তে জমে গিয়ে গেঁটে বা কিডনিসংশ্লিষ্ট জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। তবে কিছু ফলের উপাদান শরীরে প্রাকৃতিকভাবে এই ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে।
সাইট্রিক ফল:
লেবু, কমলা, জাম্বুরার মতো সাইট্রিক ফল ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ, যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। ভিটামিন সি কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড নির্গমন বাড়ায়। বিশেষ করে লেবুর রস শরীরে ক্ষারীয় পরিবেশ তৈরি করে অ্যাসিডিটি কমাতে সহায়তা করে।
গবেষণা জার্নাল ScienceDirect-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লেবুর রস বা লেবুর নির্যাস নিয়মিত সেবন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, সকালে লেবু পানি পান করা বা খাবারের ফাঁকে কমলা খাওয়া সাইট্রিক ফলের উপকারিতা সর্বাধিক করতে পারে।
বেরি:
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি বা ব্ল্যাকবেরির মতো বেরি ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও পলিফেনলসমৃদ্ধ। এসব উপাদান শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং ইউরিক অ্যাসিডের অতিরিক্ততা হ্রাসে সহায়তা করে। বেরির উচ্চ জলীয় উপাদান কিডনিকে টক্সিন ও অ্যাসিড নির্গমনে সহায়তা করে।
এক গবেষণায় (Association Among Polyphenol Intake, Uric Acid and Hyperuricemia) দেখা গেছে, উচ্চ পলিফেনল গ্রহণ রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের নিম্নমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত। এজন্য বেরি ফল প্রাতঃরাশে দই, স্মুদি বা সালাদের সঙ্গে গ্রহণ করা যেতে পারে।
চেরি:
চেরি অ্যান্থোসায়ানিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ প্রতিরোধে কার্যকর এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাসে সহায়ক হিসেবে পরিচিত। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ–এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চেরি খেলে সিরাম ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। গবেষকেরা বলেন, অ্যান্থোসায়ানিন শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে গেঁটে বা আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যার ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করে।
কলা:
পটাশিয়ামসমৃদ্ধ কলা কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে ও ইউরিক অ্যাসিডের দক্ষ নির্গমন নিশ্চিত করে। কলায় পিউরিন যৌগের মাত্রা কম থাকায় এটি উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড বা গেঁটে–আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী ফল হিসেবে বিবেচিত। PubMed Central-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কলাসহ কিছু ফল রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
উপসংহার:
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, ওষুধ ও জীবনযাপনের নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এই ফলগুলো অন্তর্ভুক্ত করলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। তবে কারও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অত্যধিক হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত।