জাতীয় ডেস্ক
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে লোকবলের স্বল্পতা এখনো একটি বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) গুলশানে ডিএনসিসির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “আমাদের কর্মীরা নিয়মিত মাঠে গিয়ে ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছেন। এর ফলে গত চার মাসে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কেবল সরকারি প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সম্ভব নয়; কারণ মশার বংশবৃদ্ধির অনেক স্থানই ব্যক্তিগত বাড়িঘরের ভেতরে—ছাদের কোণে, রান্নাঘরের নিচে বা ভবনের মধ্যবর্তী স্থানে—যেখানে সরকারি কর্মীদের প্রবেশাধিকার নেই।
তিনি বলেন, “ডেঙ্গু একটি জটিল জনস্বাস্থ্য সমস্যা। তাই একে অপরের প্রতি দোষারোপ না করে নাগরিক পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।”
ডিএনসিসি প্রশাসক আরও জানান, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যক্রমের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন ও তদারকির জন্য আলাদা মনিটরকারী দল গঠন করা হয়েছে, যারা মোটরসাইকেলে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, “এই মনিটরিং ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ফলেই মাঠপর্যায়ের কাজের গতি ও দক্ষতা বেড়েছে।”
এজাজ আরও জানান, এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সীমিত লোকবল ও সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে। তিনি বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে অফিস পরিচালনা পর্যন্ত সব কাজে কর্মীসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এই সীমিত সম্পদ ও জনবল দিয়েই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তাই নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া পুরোপুরি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”
ডিএনসিসি প্রশাসক নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “প্রত্যেকে নিজেদের বাড়িঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখলে মশার প্রজননস্থল কমে যাবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।”
সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরে বর্ষাকালজুড়ে ডিএনসিসি বিভিন্ন এলাকায় ওয়ার্ডভিত্তিক ফগিং, লার্ভা ধ্বংস কার্যক্রম এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি, নাগরিক অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হটলাইন ও অনলাইন মনিটরিং সিস্টেম চালু রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নগর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিএনসিসির সাম্প্রতিক পদক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ ও টেকসই পরিকল্পনা অপরিহার্য।