জাতীয় ডেস্ক
রাজউকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেছেন, নগর পরিকল্পনা ও ভবন নির্মাণে নানা ত্রুটি ও বিচ্যুতির কারণে সংস্থার অবস্থান এখন আসামির মতো হলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজউক শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করছে। তিনি জানান, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত, মামলা, জেল–জরিমানা এবং প্রয়োজনে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) এফডিসিতে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে ভবন মালিকদের দায়িত্ব নিয়ে অনুষ্ঠিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এবং এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন এবং তদারকি—দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বই বর্তমানে রাজউক পালন করে। তার মতে, তদারকির কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হলে তা আরও কার্যকর হতে পারে। তিনি জানান, ভূমিকম্প মোকাবিলায় শুধু রাজউক নয়, একাধিক সরকারি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পের পর কসাইটুলির ত্রুটিপূর্ণ ভবনের মালিককে এখনও শনাক্ত করা যায়নি, তবে এলাকার অন্যান্য ভবন মালিকেরা সমস্যার সমাধানে রাজউককে সহযোগিতা করছেন।
তিনি আরও বলেন, অবৈধ ভবন নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যুতের মিটার জব্দ করা হচ্ছে, প্রয়োজনে মামলা ও ভবন উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেসব প্রকৌশলী ও স্থপতি যথাযথ মানদণ্ড নিশ্চিত না করেই নকশায় স্বাক্ষর করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অতীতে যারা তথ্য গোপন বা জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক প্লট নিয়েছেন, তাদের আইনগত প্রক্রিয়ায় আনা হয়েছে। কেরাণীগঞ্জ, বসিলা, ডেমরা ও অন্যান্য এলাকায় জলাশয় ভরাট করে অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণকারী হাউজিং কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে রাজউক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ দেশে বড় ধরনের দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছেও, তবে এ বিষয়ে সচেতনতা এখনও অপর্যাপ্ত। তিনি বলেন, চলমান বিল্ডিং কোড সময়োপযোগী নয়, যা আধুনিকায়ন করা জরুরি। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সচেতনতা তৈরিতে ব্যয় করা হলেও দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যথাযথ অগ্রগতি হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে জনবলের ঘাটতি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
তিনি জানান, রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বহু হাউজিং কোম্পানি বিল্ডিং কোড বা নকশার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে উচ্চতাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করছে। তার দাবি, এসব অবৈধ নির্মাণের সঙ্গে কিছু অসাধু রাজউক কর্মচারীও জড়িত। তিনি বলেন, অনিয়ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হলেও দীর্ঘদিনের দুর্নীতি রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়।
ছায়া সংসদে “ভবন মালিকদের দায়িত্বশীলতাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে” শীর্ষক প্রতিযোগিতায় শহিদ বীর—উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ দল সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর হাতে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।