জাতীয় ডেস্ক
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশের ওপর নির্ভর করছে তার বিদেশ যাত্রার সময়সূচি। শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব তথ্য দেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. জাহিদ হোসেন জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়মিত খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন এবং চিকিৎসার প্রতিটি ধাপ সার্বক্ষণিক নজরে রাখছেন। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল বোর্ড ও সিনিয়র চিকিৎসকরাও শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়া মাত্রই বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য কাতার সরকার একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথা জানালেও কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটি আসতে পারেনি। যদিও অ্যাম্বুলেন্সটি পৌঁছালেও সেই সময়ে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিমানযোগে ভ্রমণের উপযোগী ছিল না বলে মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও তার শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হচ্ছে এবং চিকিৎসকদের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিএনপি নেতার মতে, দলের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকলেও চিকিৎসকদের মতামতই হবে সিদ্ধান্তের একমাত্র ভিত্তি। তিনি বলেন, দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ গ্রহণের জন্য দল ও পরিবার সর্বোচ্চ প্রস্তুত আছে। তবে খালেদা জিয়ার জীবনকেন্দ্রিক যেকোনো সিদ্ধান্তই মেডিক্যাল বোর্ডের ক্লিনিক্যাল মূল্যায়ন অনুসরণ করে নেওয়া হবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে দলীয় নেতৃত্ব বা রাজনৈতিক বিবেচনার কোনো প্রভাব নেই; বিষয়টি সম্পূর্ণই চিকিৎসাবিজ্ঞান ও রোগীর স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করছে।
৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটে রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা তার বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা, সংক্রমণের ঝুঁকি, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং সার্বিক শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনা করে তাকে বিদেশে নেওয়ার উপযোগিতা নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করছেন।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় ভিসা, বিমানের ব্যবস্থা, বিদেশের হাসপাতালে যোগাযোগসহ সব প্রশাসনিক ও লজিস্টিক প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। তবে চিকিৎসকদের সবুজ সংকেত ছাড়া কোনো ধরনের যাত্রা শুরু করা হবে না। এতে রোগীর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. জাহিদ হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে অপপ্রচার বা অযাচিত তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য কেবলমাত্র হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড ও পরিবারের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হচ্ছে। গুজব ও ভুয়া তথ্য রোগীর পরিবার ও সমর্থকদের জন্য অযথা উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এমন এক পর্যায়ে রয়েছে যেখানে ছোট একটি পরিবর্তনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে চিকিৎসকদের নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। বিদেশে নেওয়া হলে কোন দেশে, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা হবে—এসব বিষয়ও আগেই প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে মেডিক্যাল টিমের অনুমোদনের ওপর।
বিএনপি নেতাদের মতে, চিকিৎসা উপযোগী পরিবেশ, উন্নত প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সুবিধা পাওয়ার জন্য বিদেশে চিকিৎসা জরুরি। তারা দাবি করেন, দেশের অভ্যন্তরে সীমিত চিকিৎসা সুবিধার কারণেই বিদেশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বহুদিন ধরে আলোচনায় ছিল। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, কারণ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিএনপি, বৃহত্তর বিরোধী দলসমূহ এবং জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্রিফিং শেষে বিএনপি নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সামান্য উন্নতি বা অবনতি—উভয় ক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত দ্রুত জানানো হবে এবং প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিদেশে নেওয়ার সম্ভাবনাও খোলা থাকবে। সব সিদ্ধান্তই চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় গ্রহণ করা হবে বলে তারা পুনর্ব্যক্ত করেন।