জাতীয় ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কাতারের ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের যে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহারের জন্য নতুন আবেদন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অপারেটরের পক্ষ থেকে পূর্বের স্লট অনুমোদন বাতিলের আবেদন আসায় পরিকল্পনা অনুযায়ী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আর মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে না এবং খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রাও আপাতত স্থগিত থাকছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে জার্মানিভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ স্থানীয় সমন্বয়কারী সংস্থার মাধ্যমে অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য পূর্বে অনুমোদিত স্লট বাতিলের আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসারে এই আবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হচ্ছে। কেন এই অনুমতি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষ কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি।
রোববার প্রাথমিক আবেদনের ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় অবতরণ এবং একই দিন রাত ৯টার দিকে লন্ডনের উদ্দেশে উড্ডয়নের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জার্মান এভিয়েশন অপারেটর এফএআই এভিয়েশন গ্রুপের মাধ্যমে ভাড়া নেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বোমবার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০৪ মডেলের একটি বিশেষায়িত বিজনেস জেট, যা আন্তর্জাতিক দূরত্বে রোগী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত। বিস্তৃত মেডিকেল ইভাকুয়েশন সুবিধা ও দীর্ঘপাল্লার সক্ষমতা থাকার কারণে এই মডেলটি ঢাকা থেকে লন্ডনের মতো দীর্ঘ রুটের জরুরি চিকিৎসা পরিবহনে উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হয়।
বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে একাধিক জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগছেন। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী তার বর্তমান শারীরিক জটিলতার মধ্যে রয়েছে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং কিডনি-সংক্রান্ত সমস্যা। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরিবার, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট মহলের আলোচনার ভিত্তিতে তাকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি হিসেবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়।
২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে, যখন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি লক্ষ করা যায়। ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে তার অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হয়ে উঠলে ২৭ নভেম্বর তাকে হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড তার নিবিড় চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন যে তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং উন্নত বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, যা দেশে সীমিত।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের স্লট প্রত্যাহারের আবেদন খালেদা জিয়ার বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। অনুমতি স্থগিত হওয়ায় চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিকল্প পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক চিকিৎসা কেন্দ্রে সমন্বয় এবং চিকিৎসা–সংক্রান্ত প্রস্তুতি সাময়িকভাবে থেমে গেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন, বিমানের সময়সূচি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সমন্বয় করার বিষয়টি নতুন করে বিবেচনায় আসতে পারে।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের অনুমতি বাতিলের আবেদন চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হলে বা পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকলে, সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। চিকিৎসকদের মতে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী জটিলতায় ঘেরা হওয়ায় তার চিকিৎসায় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে স্থানান্তর সম্ভব না হলে দেশে উন্নত চিকিৎসার বিকল্প ব্যবস্থা জোরদার রাখার প্রয়োজনীয়তাও আলোচনায় রয়েছে।
বর্তমানে মেডিকেল বোর্ড তার অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং চিকিৎসা–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংগ্রহ করছে। বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা হবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে চিকিৎসকদের পরামর্শ, প্রশাসনিক অনুমোদন এবং আন্তর্জাতিক চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর প্রস্তুতির ওপর। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা পুনঃনির্ধারণ বা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।