জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের পূর্বাঞ্চলে পরিচালিত নিয়মিত টিকিট–পরিদর্শন অভিযানে এক দিনে টিকিটবিহীন ২ হাজার ৯৩ জন যাত্রীকে শনাক্ত করেছে। ৭ ডিসেম্বর পরিচালিত ওই বিশেষ অভিযানে ভাড়া এবং জরিমানা মিলিয়ে মোট ৪ লাখ ৬০ হাজার ৫৫০ টাকা আয় হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীসেবা উন্নয়ন, নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং টিকিটবিহীন ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে ট্রেনে টিকিট–পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ৭ ডিসেম্বর পূর্বাঞ্চলে ১০৪ জন টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) ৭৩টি ট্রেনে একযোগে অভিযান চালান। অভিযানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিটি ট্রেনে যাত্রীদের টিকিট যাচাই করেন এবং নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, অভিযানে শনাক্ত হওয়া ২ হাজার ৯৩ জন যাত্রীর মধ্যে অনেকে টিকিট ছাড়াই ভ্রমণ করছিলেন। তাছাড়া কিছু যাত্রীর ক্ষেত্রে টিকিটের সঠিক শ্রেণি, দূরত্ব বা যাত্রার সময়ের সঙ্গে টিকিটের তথ্য মিল না পাওয়ায় সংশোধিত ভাড়া ও জরিমানা আরোপ করা হয়। ভাড়া বাবদ আদায় হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮৫ টাকা এবং জরিমানার পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৩৯ হাজার ১৬৫ টাকা। সব মিলিয়ে রেলওয়ের আয় হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৫৫০ টাকা। ওইদিন মোট ৩ হাজার ৩৪৮টি টিকিট যাচাই করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীচাপ বাড়ার পাশাপাশি টিকিট কালোবাজারি এবং টিকিটবিহীন ভ্রমণের মতো অনিয়মও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়মিতভাবে ট্রেনে, স্টেশনে এবং অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। রেল–কর্তৃপক্ষ মনে করে, সমন্বিত নজরদারি ও কঠোর তদারকির মাধ্যমে টিকিটবিহীন যাত্রা কমানো সম্ভব হবে, যা রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মতে, টিকিটবিহীন ভ্রমণের কারণে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয়। ট্রেনের সেবার মান উন্নয়ন ও অবকাঠামো সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় অর্থের একটি বড় অংশ আসে যাত্রী পরিবহন রাজস্ব থেকে। তাই টিকিট ছাড়া ভ্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা রেলওয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আন্তনগর ও দূরপাল্লার ট্রেনে টিকিটবিহীন যাত্রী শনাক্তের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এসব ট্রেনে তদারকি আরও বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। টিকিট ইস্যু, রিফান্ড, বাতিল এবং ফেরি–সেবা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। রেলওয়ের মতে, যাত্রীরা যদি নির্ধারিত নিয়ম মেনে ভ্রমণ করেন এবং অনলাইন টিকিটিং সেবা ব্যবহার করেন, তবে টিকিটবিহীন ভ্রমণসহ নানা অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, যাত্রীদের নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সময়নিষ্ঠ সেবা নিশ্চিত করার জন্য টিকিট–পরিদর্শন অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে। ট্রেন পরিচালনার স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা রক্ষা, ভোগান্তি কমানো এবং রাজস্ব বৃদ্ধি—এই তিন লক্ষ্যে রেলওয়ে এখন আরও কঠোরভাবে নিয়ম প্রয়োগ করছে। ভবিষ্যতে যাত্রীচাপ বাড়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে স্টেশন ও ট্রেন–উভয় পর্যায়ে প্রযুক্তিনির্ভর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
রেলওয়ের মতে, একদিনে পরিচালিত উক্ত অভিযানের ফলাফল টিকিটবিহীন ভ্রমণের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। রেল–অধিকারা আশা করছেন, ধারাবাহিক অভিযান ও উন্নত তদারকির মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে এবং টিকিটবিহীন যাত্রীসংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। পাশাপাশি, ট্রেন ভ্রমণ আরও শৃঙ্খলিত হলে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলে রেলসেবার ওপর যাত্রীদের আস্থা আরও বাড়বে।
রেলওয়ে জানায়, যাত্রীদের নিয়মিত টিকিট কেটে ভ্রমণের আহ্বান জানানো হচ্ছে এবং ট্রেনে ভ্রমণের সময় টিকিট সঙ্গে রাখার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। যাত্রীরা যদি নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে ট্রেন ভ্রমণের পরিবেশ আরও স্বচ্ছ, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ হবে বলে রেলওয়ের ধারণা।