জাতীয় ডেস্ক
নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, যেসব এলাকায় নিয়মিত বিদ্যুৎ সুবিধা নেই, সেখানে বিকল্প আলোকসজ্জার ব্যবস্থা রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামিকাল অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে আলোর প্রয়োজন পড়বে। বিশেষ করে শীতকালীন পরিবেশে দিনের আলো দ্রুত কমে যাওয়ায় আলোকসজ্জার বিকল্প ব্যবস্থা রাখা জরুরি। তিনি জানান, সরকার ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে, যাতে কোনো কেন্দ্রে আলো ঘাটতি সৃষ্টি না হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, নিরাপত্তা পরিকল্পনায় মাঠপর্যায়ের টহল বৃদ্ধি, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত মোবাইল দল নিয়োজিত করা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
সম্প্রতি রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘটনার পর দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং অপরাধীদের শনাক্তে কাজ করছে।
নির্বাচনের আগে বিচ্ছিন্ন সহিংস ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের অপরাধ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়; তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত নজরদারি, গোয়েন্দা তৎপরতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত গণভবন এলাকায় গণমিউজিয়াম খোলা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মিউজিয়ামটির প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবেশপথ, তল্লাশি ব্যবস্থা ও সার্বিক নিরাপত্তা প্রটোকল নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আলোচনায় রয়েছে।
দেশের জনগণের একাংশ এখনো নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে সন্দিহান—এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার। তিনি জানান, নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা ও প্রস্তুতি নিয়মিতভাবে চলমান, এবং বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থা সৃষ্টি করছে। তিনি গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান, যাতে নির্বাচন সম্পর্কিত সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছায়।
তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো সমানভাবে প্রচারণা চালাতে পারবে কিনা—এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো বৈধ রাজনৈতিক দলকে মাঠে নামতে বাধা দিচ্ছে না। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচারণা চলছে এবং প্রশাসন নিশ্চিত করছে যেন সবাই আইন মেনে প্রচারণা পরিচালনা করতে পারে।
সাম্প্রতিক সংঘাতে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রসমূহের বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হবে।
নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় বডি ক্যামেরা ব্যবহারের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বহু আগেই বডি ক্যামেরা কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী সদস্যদের একটি বড় অংশকে বডি ক্যামেরা সরবরাহ করা হবে, যাতে দায়িত্ব পালনের স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং কোনো অভিযোগ উদ্ভূত হলে তথ্য-প্রমাণ যাচাই করা সহজ হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আলোচিত এসব বিষয় নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তুতি চূড়ান্তে কাজ করছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সমন্বিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।