বিনোদন ডেস্ক

সম্প্রতি ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নেহা কক্করের একটি লাইভ স্টেজ পারফরম্যান্সের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তা ঘিরে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একটি কনসার্টে গান পরিবেশনের সময় শিল্পীর বিশেষ অঙ্গভঙ্গি ও নিজের শরীরে পানি ঢালার মুহূর্ত ধারণ করা ভিডিও প্রকাশের পর দর্শক ও অনলাইন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, নেহা কক্কর মঞ্চে সংগীত পরিবেশনের এক পর্যায়ে হাতে থাকা একটি পানির বোতল থেকে শরীরের উপরের অংশে পানি ঢালেন। এর সঙ্গে রয়েছে সমন্বিত কোরিওগ্রাফি, যা মুহূর্তেই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভিডিওটি নেটমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে এটি ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছেছে।

মঞ্চ পারফরম্যান্সে কণ্ঠশিল্পীদের বিভিন্ন আঙ্গিক প্রয়োগ নতুন নয়। আধুনিক কনসার্ট সংস্কৃতিতে দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখতে চিত্রনির্ভর উপস্থাপনা, বিশেষ আলো–ছায়ার ব্যবহার অথবা সাহসী কোরিওগ্রাফির প্রয়োগকে অনেক শিল্পীই বেছে নেন। নেহা কক্করের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও সেই প্রবণতার ধারাবাহিকতা বলেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তবে ভিডিওটি যখন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা বৃহত্তর সামাজিক পরিসরে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন আলোচনায় দেখা যায়, ব্যবহারকারীদের একটি অংশ বিষয়টিকে শিল্পীর পারফরম্যান্স কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে আরেকটি অংশ তা শিল্প-রুচির সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

অনলাইন প্রতিক্রিয়ার বিস্তার সেলিব্রিটিদের পারফরম্যান্স নিয়ে বর্তমান যুগের সংবেদনশীলতারও প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। নেটমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য, ছবি বা ভিডিও মুহূর্তে লাখো মানুষের কাছে পৌঁছানোর কারণে জনপরিচিত ব্যক্তিত্বদের ব্যক্তিগত বা পেশাগত কর্মকাণ্ড ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সাম্প্রতিক ভিডিওটিও একই বাস্তবতার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে; কারণ এটি কেবল কনসার্টের দর্শকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বৈশ্বিক অনলাইন অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যায়।

নেহা কক্করের অতীতে কয়েকটি পারফরম্যান্স নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা হয়েছিল। কিছু পরিবেশনায় তিনি আধুনিক নৃত্যশৈলী ও চিত্রময় কোরিওগ্রাফির ব্যবহার করেন, যা অনেক সময় তাকে খবরের শিরোনামেও এনেছে। এসব পারফরম্যান্স ভারতের মূলধারার সংগীতাঙ্গনে বিদ্যমান উপস্থাপনা-প্রধান শোর ধারার একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রভাব ভিন্নমাত্রা সৃষ্টি করে।

সাম্প্রতিক ঘটনাটি আলোচনা তৈরি করার আরেকটি দিক হলো দক্ষিণ এশিয়ার বিনোদন অঙ্গনে মঞ্চ উপস্থাপনার পরিবর্তিত ধারা। দেশ-বিদেশের বড় কনসার্টগুলোতে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে শিল্পীরা আধুনিক কোরিওগ্রাফি, পোশাক ও আলোকসজ্জার ব্যবহার বাড়াচ্ছেন। এতে কনসার্ট সংস্কৃতির বৈশ্বিক প্রভাব যেমন দৃশ্যমান, তেমনি কিছু বিষয়ের সাংস্কৃতিক উপযোগিতা নিয়ে আলোচনাও তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মঞ্চনির্ভর বিনোদন শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীর সৃজনশীলতা, দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা ও সামাজিক রুচির বহুমাত্রিকতা আরও জটিল হচ্ছে। ফলে অনেকসময় সাধারণ একটি পারফরম্যান্সও অনলাইনে বৃহদাকারে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।

এ ঘটনায় নেহা কক্করের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে তার অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেখা যায়, শিল্পী সাধারণত নিজের পারফরম্যান্স কৌশলকে পেশাদার সংগীত পরিবেশনার অংশ হিসেবেই ব্যাখ্যা করে থাকেন। বর্তমান ভিডিওটি নিয়ে দর্শক ও অনলাইন ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া সংগীত উপস্থাপনার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেলিব্রিটি কনটেন্টের প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিতর্ক কতদিন স্থায়ী হবে বা এর কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসবে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় শিল্পীদের পারফরম্যান্স নিয়ে ডিজিটাল পরিসরে আলোচনার যে সহজ বিস্তার ঘটছে, তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।