নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত তারেক এ আদেল। এনসিপি গতকাল বুধবার সকাল থেকে প্রথম ধাপে মোট ১২৫ জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে, যেখানে তারেক এ আদেলের নাম চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

মনোনয়ন ঘোষণার এ সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এখনো জাতীয় পার্টির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তারেক এ আদেলকে দলটির উপদেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ওয়েবসাইটে তার পরিচিতি, ছবি এবং বর্তমান পদ অনুযায়ী তাকে জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা হিসেবেই উল্লেখ করা রয়েছে। ফলে ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের দুটি প্ল্যাটফর্মে তার অবস্থান নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দুই দল থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

এনসিপির মনোনয়ন ঘোষণার সময়ে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, তাদের মনোনয়ন বাছাই প্রক্রিয়া চলমান ও কঠোর নিয়মের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। তিনি বলেন, মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করার ক্ষমতা দল ব্যবহার করবে।

দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এনসিপি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কাউকে প্রার্থী হিসেবে রাখতে চায় না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেসব ব্যক্তি অতীতে বিভিন্ন বড় রাজনৈতিক দল বা জনসম্পৃক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রেও কঠোর যাচাই-বাছাই করা হবে। তিনি আরও জানান, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করা হলে দল তাৎক্ষণিকভাবে প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করবে।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দল দেশের প্রতিটি আসনে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে চায় এবং সেই লক্ষ্যেই মনোনয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, কোনো আসনে মনোনয়ন ঘোষণার পরও যদি নতুন করে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় বা তার চেয়ে যোগ্য কেউ পাওয়া যায়, তাহলে বর্তমান সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে চলমান অনুসন্ধান ও যাচাই প্রক্রিয়া নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চলবে বলেও তিনি জানান।

ঢাকা-৭ আসন দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ আসনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবসময়ই তীব্র হয়ে থাকে। আসন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী, জোটের অবস্থান, ভোটারদের প্রত্যাশা এবং পূর্ববর্তী নির্বাচনের অভিজ্ঞতার কারণে এবারও এই আসনকে কেন্দ্র করে আগ্রহ রয়েছে। ফলে নতুন দলের প্রার্থী হিসেবে তারেক এ আদেলের অংশগ্রহণ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

এনসিপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, সততা এবং যোগ্যতার ওপর জোর দেওয়ার ঘোষণার ফলে দলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা থাকলেও এখনো স্পষ্ট নয়, চূড়ান্তভাবে কোন কোন প্রার্থী ব্যালট পেপারে জায়গা পাবেন। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে প্রার্থীদের প্রচার, দলীয় কৌশল, জোটগত সমীকরণ এবং ভোটারদের প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ আরো পরিবর্তন হতে পারে।

আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এনসিপির ঘোষিত প্রাথমিক তালিকা এবং পরবর্তী সম্ভাব্য সংশোধন নির্বাচনী মাঠে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে এসব সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত প্রভাব জানা যাবে নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী প্রার্থী তালিকা জমা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর।