জেলা প্রতিনিধি
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেঁড়ির মাথা এলাকায় আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে তিনি এ বক্তব্য দেন।
এ্যানি বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, যদি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার স্বার্থে বিদেশ যাত্রা প্রয়োজন হয়, তবে পরিবারের সদস্য হিসেবে ছেলের উপস্থিতি প্রাসঙ্গিক হতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে তিনি উল্লেখ করেন যে বিদেশে নেওয়ার পরিস্থিতি না হলে তারেক রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই দেশে ফিরতে পারেন।
উঠান বৈঠকে এ্যানি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠিন হবে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভোটের পরিবেশ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হবে একটি “অদৃশ্য শক্তির” বিরুদ্ধে—যা তিনি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তার অভিযোগ, অতীতের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের কারণে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে।
এ্যানি আরও বলেন, বিএনপি আগামীদিনে দলের নেতৃত্ব ও কর্মসূচি নিয়ে সুসংগঠিতভাবে মাঠে থাকবে। তারেক রহমানের সম্ভাব্য দেশে ফেরা দলীয় নেতৃত্ব পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন আরও শক্তিশালী করার কথাও তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সমর্থকদের আস্থা পুনরুদ্ধার ও সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়াতে দল প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
উঠান বৈঠকে বক্তারা স্থানীয় উন্নয়ন, ভোটারদের অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। উপস্থিত নেতারা দাবি করেন, নির্বাচনের আগে মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। তারা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য। এ ছাড়া স্থানীয় সাধারণ মানুষ যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন—যেমন অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধা ও সেবার ব্যত্যয়—সেগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতিও নেতারা তুলে ধরেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম লিটন, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন, জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবেরা আনোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আক্তার সুমি ভূঁইয়াসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
নেতারা বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ভোটারদের মতামত ও অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তারা স্থানীয় জনগণকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে জনগণের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। মাঠপর্যায়ের কর্মীদের উদ্দেশে নেতারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সভায় বক্তারা আরও বলেন, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিরোধী দলের জন্য আগামী নির্বাচনী পরিবেশ একটি বড় পরীক্ষা। তারা আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে এবং প্রশাসন ভোটারদের নিরাপদ অংশগ্রহণে সহায়তা করবে। একইসঙ্গে ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এ্যানির বক্তব্য ও উপস্থিত নেতাদের আলোচনায় স্পষ্ট হয় যে তারেক রহমানের দেশে ফেরা, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং দলের সাংগঠনিক অবস্থানকে আগামীদিনের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে দলের তৃণমূল শক্তিকে সক্রিয় রাখার মাধ্যমে নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।