নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ১২৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়। ঘোষিত তালিকায় মোট ১৪ জন নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যা দলটির প্রার্থী কাঠামোয় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির একটি নির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রাথমিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নারী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন নওগাঁ-৫ আসনে মনিরা শারমিন, সিরাজগঞ্জ-৩ এ দিলশানা পারুল, সিরাজগঞ্জ-৪ এ দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী (প্রীতি), ঝালকাঠি-১ এ ডা. মাহমুদা আলম মিতু, ময়মনসিংহ-১১ এ তানহা শান্তা এবং ঢাকা-৯, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৭ ও ঢাকা-২০ আসনে যথাক্রমে ডা. তাসনিম জারা, নাহিদা সারওয়ার নিভা, ডা. তাজনূভা জাবীন ও ইঞ্জিনিয়ার নাবিলা তাসনিদ। এছাড়া ফরিদপুর-৩ এ সৈয়দা নীলিমা দোলা, চাঁদপুর-২ এ ইসরাত জাহান বিন্দু, নোয়াখালী-৫ এ অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর, চট্টগ্রাম-১০ এ সাগুফতা বুশরা মিশমা এবং খাগড়াছড়ি আসনে অ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন।
দলের প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নেতারা জানান, তালিকাটি এখনও যাচাই–বাছাইয়ের আওতায় রয়েছে। সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় বা প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণে ঘাটতি দেখা দেয়, তবে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। তিনি আরও জানান, তিন ধাপে দেশের সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা সম্পন্ন করা হবে, এবং পরবর্তী ধাপগুলোয় দলীয় কাঠামো, যোগ্যতা ও নির্বাচনি পরিস্থিতি বিবেচনা করা হবে।
দলের যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা জানান, মনোনয়ন তালিকা প্রণয়নে পেশাগত বৈচিত্র্য, সততা ও সমাজসেবায় সম্পৃক্ততার মতো যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং নির্ধারিত বিধি-বিধান অনুসরণ করে গণভোটে অংশ নেবেন। দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দেখা হবে প্রার্থীরা নির্বাচনি আচরণবিধি ও প্রযোজ্য আইন যথাযথভাবে মানছেন কি না।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দলটি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনোভাবেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করবে না। তিনি জানান, মনোনীত প্রত্যেককে নির্বাচনের নিয়মকানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রার্থী যদি আচরণবিধি ভঙ্গ করেন বা বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করেন, তবে দল থেকে তার মনোনয়ন বাতিল করা হবে।
দলের মনোনীত কয়েকজন নারী প্রার্থী জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে দল যেভাবে নারীদের অংশগ্রহণে গুরুত্ব দিচ্ছে, তা দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে তাদের বক্তব্য থেকে আবেগঘন অংশ বাদ দিয়ে বলা যায়, তারা প্রার্থী হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং নির্বাচনি এলাকায় সংগঠন ও প্রচারণা কার্যক্রম সক্রিয় করার পরিকল্পনা করছেন। মনোনীত ব্যক্তিদের মতে, নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়লে স্থানীয় উন্নয়ন, নারী অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে আরও অধিক সচেতনতা তৈরি হতে পারে।
এনসিপির প্রাথমিক তালিকা ঘোষণার মাধ্যমে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আসনভিত্তিক প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলটি স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ভোটারদের আস্থার মাত্রা, সাংগঠনিক শক্তি এবং সম্ভাব্য নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঘোষিত তালিকা দলটিকে আগামী সপ্তাহগুলোতে প্রচারণা কৌশল নির্ধারণ, সমর্থক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় এবং নির্বাচনি মাঠে অবস্থান সুদৃঢ় করতে সহায়তা করবে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তকরণ, নির্বাচনি বার্তা প্রচার, মাঠপর্যায়ের সংগঠন সক্রিয় করা এবং প্রচারণা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো প্রস্তুতিগুলো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এনসিপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দলটির নেতৃত্ব জানিয়েছে, অবশিষ্ট আসনগুলোতেও মনোনয়ন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে প্রচারণা পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এভাবে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এনসিপি আনুষ্ঠানিক নির্বাচন অভিযানে প্রবেশ করেছে। আগামী ধাপে দলটির নীতি–নির্ধারকরা মনোনীতদের নিয়ে নির্বাচনি এলাকা ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় এবং ভোটার যোগাযোগ কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে।