রাজনীতি ডেস্ক

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে মতবিনিময় করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকার গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া এবং যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। এছাড়া ইইউ ডেপুটি রাষ্ট্রদূত বাইবা জারিনা, ইইউ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) সেবাস্তিয়ান রিগার ব্রাউনসহ জার্মানি, ইতালি, স্পেন, সুইডেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বৈঠকে উভয় পক্ষ নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক পরিবেশ, দলগুলোর অংশগ্রহণ, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করে। এনসিপি প্রতিনিধি দল নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এবং দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ, প্রার্থীদের মনোনয়ন কার্যক্রম ও মাঠ পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে। বৈঠকে দলটি জানায় যে, নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা, প্রশাসনিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ পূর্বেই কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তারা বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে। বৈঠকে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্বাচনী পরিবেশে সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা যায়। কূটনীতিকরা নির্বাচন-পূর্ব সময়ে পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার আগ্রহের কথাও জানান।

এনসিপি প্রতিনিধি দল আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখাকে নির্বাচনকালীন সময়ে আস্থা সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উল্লেখ করে। তারা কূটনীতিকদের জানায় যে, দেশের জনগণ একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করছে এবং নির্বাচনে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা হলে জনগণের আস্থা বাড়বে। দলটির নেতারা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া কূটনীতিকরা রাজনৈতিক সংলাপ, পারস্পরিক আস্থা এবং সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা উল্লেখ করেন যে, নির্বাচনকালীন যেকোনো উত্তেজনা বা সহিংসতা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে প্রভাবিত করতে পারে। বৈঠকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সকল পক্ষের সহযোগিতা অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এই বৈঠককে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, প্রত্যাশা ও উদ্বেগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থাপনের একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এ ধরনের মতবিনিময় ভবিষ্যতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, রাজনৈতিক সংলাপ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নয়ন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আয়োজনের পথ সুগম করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বৈঠককে চলমান নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।